আমরা সবাই জানি, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ। এই কালোজিরা যেমন আমাদের প্রতিদিনের খাবারের একটি অনন্য অংশ হতে পারে, তেমনি আমাদের নানা ধরনের রোগ থেকে আমাদের শরীরকে ভিতর হতে রক্ষা করে। কালোজিরা একটি বিশেষ ভেষজ খাবার যা সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা আমাদের আগের পোস্টে কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, ঠিক কতোটুকু খাওয়া উচিত ও খেলে কি হয় ইত্যাদি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা আমাদের এই পোস্টে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও এর কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করবো।
কালোজিরার খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন? না জানলে আমাদের এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।
খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি হয়?
গবেষণায় দেখা যায়, খালি পেটে কালোজিরা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কালোজিরা হজমে সহায়তাকারী এনজাইমের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বলে এতে পেটের গ্যাস ও পেটের ফোলাভাব এর সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে কালোজিরা বেশ উপকারে আসে।
প্রতিদিন ঠিক কতোটুকু কালিজিরা খাওয়া উচিত তা বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে ভালোভাবে জেনে নিন।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা যেমন আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে, অন্যান্য খাবার তেমনটা সাহায্য করতে পারে না। কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার নানা উপকারিতা রয়েছে। এর উপকারিতাগুলোর কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবুও আপনাদের বোঝার ও জানানোর সুবিধার্থে আমরা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করছি।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
কালোজিরা ফাইবারের একটি ভালো উৎস হওয়ায় হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে থকা ফাইবার পানি শোষণ করে পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অপেচনা এবং গ্যাসের মতো নানা হজমের সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হজম প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতির বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে। কেননা, ফ্রি র্যাডিকেলগুলো প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং হজমতন্ত্রের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কালোজিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি এই ক্ষতি প্রতিরোধ করে হজমতন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখতে বিশেষ সহায়তা করে। কালোজিরা হজমের এনজাইম নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে, যা খাবার ঠিকভাবে ভাঙতে এবং পুষ্টি উপাদান শোষণে সহায়তা করে। এটি বিশেষ করে চর্বি হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, প্রদাহ হ্রাসে, ক্রন’স রোগ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ সারানোর জন্য কালোজিরা বেশ উপকারী খাবার বলে মনে করা হয়।
চিয়া সিড খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে আমাদের এই বিস্তারিত পোস্টটি জেনে নিন।
কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
কালোজিরাতে ‘টাইমোকুইনোন’ নামক একটি যৌগ থাকে যা শরীরের LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং শরীরে HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কালোজিরা গ্রহণকারীদের LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
উচ্চ কোলেস্টেরলের সাথে প্রদাহ যুক্ত থাকে। কালোজিরার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রক্তে প্রদাহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’ হল রক্তে এমন এক ধরনের চর্বি যা উচ্চ মাত্রায় থাকার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কালোজিরা রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
কালোজিরায় থাকা বিশেষ অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদানগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় যে, কালোজিরা যারা নিয়মিত গ্রহণ করে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা আশ্চর্যরকমভাবে কমে গিয়েছে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা রক্তে সঠিকভাবে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কালোজিরার বিশেষ প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য এর প্রদাহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। কালোজিরা বিশেষভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ডায়াবেটিসের নানা জটিলতাগুলোকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে জেনে নিন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
কালোজিরা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের স্মৃতিশক্তি এবং মনস্থির করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। কালোজিরার এই প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য মস্তিষ্কে প্রদাহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ফলস্বরূপ আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কালোজিরা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। অতিরিক্ত স্ট্রেস এবং উদ্বেগ আমাদের স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে, নিয়মিত কালোজিরা খেলে মেজাজ উন্নত করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে যা স্মরণশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মেধা বিকাশেও সহায়তা করে। ১ চা চামচ কালোজিরার সাথে ১ কাপ গরম পানিতে প্রায় ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে চা তৈরি করে দিনে একবার এই চা পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়
গ্যাস্ট্রিকের একটি প্রধান কারণ হল পেটের প্রদাহ সৃষ্টি হওয়া। কালোজিরার উপযোগী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য আমাদের পেটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিকের নানা উপসর্গগুলো ঠিক করতে পারে। কালোজিরা হজমক্রিয়া উন্নত করে গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং অজীর্ণের সমস্যার মতো বিভিন্ন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। কালোজিরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য কিছু ধরণের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে যা গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে। কালোজিরা পেটের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে, যা পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি কমায়।
নিয়ম করে ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানতে চান? আমাদের এই পোস্টটি পড়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
কিডনির সমস্যা দূর করে
কিডনি সমস্যা দূর করতে কালোজিরা বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কালোজিরা নিয়মিত সঠিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে অর্থাৎ কালোজিরা গুঁড়ো করে বা ভাজা কালোজিরা চিবিয়ে খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কমে যায়। খালি কালোজিরার সাথে একটু মধু মুখে নিলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সুতরাং, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কালোজিরা খেলে অকালে কিডনির ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
কালোজিরাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেশি থাকায় যা মুক্ত র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই মুক্ত র্যাডিকেল ত্বকের বার্ধক্যের প্রধান লক্ষণ যেমন ত্বকে ভাঁজ পড়া এবং বলিরেখা তৈরির জন্য দায়ী। তাই নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খেলে ত্বকের লালভাব এবং চুলকানি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কালোজিরা ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে যে ব্যাকটেরিয়া গুলো ব্রণের কারণ হতে পারে। নিয়ম করে কালোজিরা সেবন করলে ত্বকের কোষ পুনরায় তৈরি হয়, যা ত্বককে আরও উজ্জ্বল এবং ভেতর থেকেই মসৃণ করে তোলে।
চিয়া সিড কি ও এর বিশেষ পুষ্টিগুণ আপনাদের জানাতে আমরা এই পোস্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে কালোজিরা টেস্টোস্টেরন মাত্রা বৃদ্ধি করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। এই কালোজিরা শরীরের ক্লান্তি কমায় এবং শক্তির স্তর উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কালোজিরা ভাজা অবস্থায় চিবিয়ে খেলে মানসিক চাপ কমে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, কালোজিরা উভয় লিঙ্গের মানুষের ‘লিবিডো’ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা দূর করে
কালোজিরার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে জন্ডিসের সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং এই সমস্যা উন্নত করতে পারে। কালোজিরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে যা জন্ডিসের কারণ হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, কালোজিরা লিভারের ফাংশন উন্নত ও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আমাদের লিভার এক ধরনের পিত্ত তৈরি করে যা চর্বি হজম করতে সহায়তা করে। এই কালোজিরা লিভারকে সেই পিত্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
খেজুরের গুড়ের বিশেষ উপকারিতা কি কি জানেন? আমাদের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ নিরাময় করে
হাঁপানি সমস্যার একটি প্রধান কারণ হলো শ্বাসনালীর প্রদাহ হওয়া। এই কালোজিরার শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য শরীরের শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন উপসর্গগুলি উন্নত করে। হাঁপানি হলে, শ্বাসনালীর পেশীগুলো সংকুচিত হয় এবং এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খেলে শ্বাসনালীর পেশীগুলিকে শিথিল করে এবং দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া উন্নত করে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে ‘হিস্টামিন’। এই খাদ্য উপাদান হিস্টামিনের প্রভাবকে প্রতিহত করে এবং অ্যালার্জির কারণে হওয়া শরীরের শ্বাসকষ্টের উপসর্গগুলো কমিয়ে দেয়। সুতরাং, বলা যায় যে, কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
যারা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য কালোজিরা একটি আদর্শ খাবার। বিশেষ করে ভাজা কালোজিরা চিবিয়ে খেলে বা এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়
কিছু লোক মনে করে থাকেন যে, কালোজিরা এস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যেটি একটি অনিয়মিত পিরিয়ডের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। নিয়মিত পিরিয়ডের জন্য পর্যাপ্ত রক্ত পরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কালোজিরা রক্ত পরিবহন বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক হয়।
রাতে মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সঠিক সময় জানতে আমাদের এই পোস্টটি জেনে নিন।
রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস বা পিঠের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে
রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস বা পিঠের ব্যথার জন্য কালোজিরা একটি ভালো খাবার হতে পারে। কালোজিরা জয়েন্ট এবং পেশীর ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। কালোজিরা শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে মুক্ত করে যা গ্রানুলোমাটাস টিস্যু ক্ষতির জন্য দায়ী যা রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যার সাথে জড়িত। এই কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
শিশুর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে
কালোজিরাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং লোহার মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে যা শিশুর সঠিক দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। কালোজিরা শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানো উচিত নয়। কেননা, তাদের হজমতন্ত্র সেই বয়সে পুরোপুরি বিকাশিত হয় না এবং এটি পেট খারাপের কারণ হতে পারে। শিশুদের অবশ্যই কালোজিরা গুঁড়ো করে অল্প পরিমাণে খাওয়ালে সবচেয়ে বেশি ভালো। এতো কম বয়সী শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
বিশেষ যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মধুর উপকারিতাগুলো জানতে আমাদের লেখা পোস্টটি পড়ে নিন।
মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে
কালোজিরা অনেক দিন ধরে নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে মায়েদের বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কালোজিরার বেশ সুনাম রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে যারা প্রথমবার মা হয়েছেন, তাদের জন্য খুবই উপকারী। কালোজিরাতে যে গ্যাল্যাক্টোজেনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা মায়েদের শরীরে দুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে বিধায় দুধের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ৫ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা চিবিয়ে বা মিহি করে খেলে ভালো উপকার পাবেন। এছাড়াও ভর্তা করে ভাতের সাথে মাখিয়ে খেতে পারেন।
চুল পড়া রোধ করে
কালোজিরাতে বেশ ভালো পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করে এবং নতুন চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই খাদ্য উপাদান হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। এই কালোজিরা আমাদের মাথার ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে যা চুল পড়ার একটি কারণ হতে পারে। সকালে বা বিকালে কালোজিরা চিবিয়ে খেলে মাথার ত্বক সুস্থ থাকবে এবং কালোজিরার তেল চুলে মাখলে চুল মজবুত হবে, সহজে পরবে না।
মধুর উপকারিতা ও এর বিশেষ গুণাগুণ জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
নানা রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে
নিয়মিত কালোজিরা চিবিয়ে খেলে শরীরকে সতেজ করে এবং শরীরের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এছাড়াও, পেটে ব্যথা, অরুচি, ডায়রিয়া, জন্ডিস, গলা ও দাতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, দাদ, একজিমা, কাশি, হাঁপানি, টিউমার ও ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার, ক্ষতিকর ভাইরাস, অ্যালার্জি, ব্যকটেরিয়া, অবসন্নতা, অলসতা, গায়ের ব্যথা ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কালোজিরার ক্ষতিকর দিক বা কালোজিরার অপকারিতা
কালোজিরার যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি কালোজিরার কিছু ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। বেশি পরিমাণে কালোজিরা খেলে ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা,চর্মরোগের সমস্যা, শরীরের রক্ত জমাটে বাঁধা, পাকস্থলীর সংকোচন, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালাপোড়া করা, অকালে গর্ভপাত এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। এর ফলে কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারো ডায়াবেটিস এর সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিমাণমতো কালোজিরা খেতে হবে।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কালোজিরা যতই ভালো হোক না কেন, আমাদের সবসময় নিয়ম করে এবং পরিমাণমতো খেতে হবে। এগুলো যেমন আমাদের শরীরকে রক্ষা করে, তেমনি মনকে সজীব ও সতেজ করে।
তথ্যসূত্র
JagoNews24- মাথায় চুল গজাতে কালোজিরা ব্যবহার করবেন যেভাবে
সুন্নতী- কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সমস্ত রোগের মহাওষুধ
Jugantor- গোপন দুর্বলতায় ভায়াগ্রা নয়, কালোজিরা খান
সময় নিউজ- খালি পেটে কালোজিরা খেলে কী হয়?
শিক্ষক বাতায়ন- কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
Bangla Tribune- কালোজিরা ও মধু হইতে সাবধান!
Rsfahimit- মধু রসুন ও কালোজিরা একসাথে চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি হয়?
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে হজম শক্তি বাড়ে, পেটের ফোলাভাব কমায় ও গ্যাসের সমস্যা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
প্রতিদিন কালোজিরার তেল খেলে কি হয়?
প্রতিদিন কালোজিরার তেল খেলে ত্বক মসৃণ হয়, পাকস্থলী সুস্থ থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ওজন কমাতে কালোজিরা খাওয়ার উপায়?
ওজন কমাতে এক টেবিল চামচ কালোজিরার বীজ এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করলে দ্রুত ওজন কমে যাবে।
কালোজিরা খেলে কি ওজন কমে?
হ্যাঁ। কালোজিরা খেলে এর নানা বৈশিষ্ট্যের জন্য শরীরের ওজন কমবে। তাই অনেক রোগের ব্যথানাশক ও উপশমের পাশাপাশি ওজন কমাতেও বেশ সাহায্য করে থাকে।
কালোজিরা কি চুলের জন্য ভালো?
কালোজিরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর বিভিন্ন উপকারিতা হিসেবে চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর চুল বজায় রাখতে কালোজিরাড় জুড়ি নেই। এছাড়া, মাথার ত্বকের জন্য ও মাথায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সঞ্চালনের জন্য কালোজিরার তেল মাখলে চুল পড়া প্রতিরোধ করা যায়।
কালোজিরার তেল চুল গজাতে কতদিন লাগে?
কালোজিরা বীজের তেল চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধি প্রায় ২ থেকে ৪ গুণ করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ৩ মাসের মধ্যে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।