মধু পরীক্ষা করার নিয়ম কি এবং আপনি কিভাবে যাচাই বাছাই করবেন?
মধু কিনতে গেলে কমবেশি সবাই বিপাকে পড়ে। সব মধুর চেহারা একই রকম হওয়ায় বোঝা যায়না কোনটি আসল, কোনটি নকল। তাছাড়া বাজার এখন নকল মধুতে ভরপুর খাঁটি মধু চেনার উপায় বা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তবে আসল মধু চেনার আগে চিনতে হবে নকল মধু। মধু খাঁটি কিনা তা নিশ্চিত হতে আগে আপনাকে জানতে হবে কোন এলাকার মধু কেমন হয়। কারণ বাংলাদেশের মধ্যে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে মধু হালকা তরল হয়, আবার মধুতে ঝাঁকি দেল ফেনাও হয়। আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে অনেক ভাবে মধু পরীক্ষা করতে পারবেন। এজন্য মধু পরীক্ষা করার নিয়ম জেনে নেয়া জরুরী।
পানি দিয়ে মধু পরীক্ষা
প্রথমে এক গ্লাস পানিতে এক বা দুই চামচ পরিমাণ মধু নিন। এরপর গ্লাসটি আস্তে আস্তে নাড়াচাড়া করতে থাকুন। যদি দেখতে পান মধু পানির সঙ্গে মিশে গেছে নিশ্চিত হবেন সেটা ভেজাল মধু। আর মধু যদি ছোট পিণ্ডের মতো বা ‘ড্রপ‘ অবস্থাতে গ্লাসের পানিতে ছড়িয়ে যায়, অর্থাৎ পানিতে মিশে না যায় তা হলে বুঝে নিবেন সেটি খাঁটি মধু। খাঁটি মধু এর বৈশিষ্ট্য হলো তা পিণ্ডের মত বা ড্রপ অবস্থায়ই বসে থাকে, তা পানি বা যে কোন দ্রবনীয় বস্তুর সাথে মিশে যায় না, যখক্ষণ পর্যন্ত তা অনেক বেশি নাঁড়া-চাঁড়া করা না হয়।
সকালে খালি পেটে মধু খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
তা ছাড়াও আসল মধু ঘন ও অনেক বেশি আঠালো হয়, তাই পানির নীচের চলে যাবে, অপরদিকে নকল কম আঠালো হয় যা পানি দেওয়ার সাথে সাথে মিশে যাবে। এছাড়া হাতের আঙুলে একটু মধু নিয়ে তা ঘন কিনা নাকি পাতলা সেটা বুঝে নিতে পারেন। কম ঘন ও কম আঠালো হলে নিশ্চিত থাকতে পারেন তা নকল, তবে কিছু স্থান বেধে আবার কিছু মধু হালকাও হতে পারে। যেমনঃ সুন্দরবনের মধু ৩০% পানি জাতীয় হয়ে থাকে।
আগুন দিয়ে মধু পরীক্ষা
নকল মধু চেনার আরেক সহজ নিয়ম হল যে, নকল মধুতে সহজে আগুনে ধরে না। যে কোন একটু উুঁচুঁ স্থানে ১ থেকে ২ ফোটা মধু নিন, একটি ম্যাচের কাঠি দিয়ে ঐ মধুতে আগুন ধরিয়ে দিন, যদি নকল মধু হয় তাহলে আগুন ধরবে না আর আসল মধুতে দ্রুত আগুন ধরবে। একটু তুলো মধুতে ভিজিয়ে ম্যাচ দিয়ে তুলোটিতে আগুন ধরিয়েও দেখতে পারেন, যদি দ্রুত আগুন না ধরে তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল।
মধু খেলে কি হয় ও সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি? জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন
গরম পানিতে দিয়ে মধু পরীক্ষা
অনেকদিন ঘরে রেখে দিলে মধুতে চিনি জমতেই পারে। কিন্তু পাত্র সহ মধু গরম পানিতে চুবিয়ে দিন কিছুক্ষণ রেখে দেখুন, চিনি গলে গিয়ে মধু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু নকল মধুর ক্ষেত্রে এটা কখনোই হবে না।
মধু খাচ্ছেন কিন্তু জানেন না কিভাবে প্রতিদিন নিয়ম করে মধু খাবেন? বিস্তারিত জানতে এখনই আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
কাগজের টুকরো দিয়ে মধু পরীক্ষা
এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিন অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু মোটা যে কোন সাদা কাগজ নিন। তাতে কয়েক ফোঁটা মধু দিয়ে দিন। যদি দেখতে পান কাগজ তা সম্পূর্ণ চুষে নিয়েছে তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়, কারণ খাঁটি মধু কাগজের সাথে মিশে যাবে না বা কাগজ সম্পূর্ণ চুষে নিতে পারবে না। কাগজের উপর মধুর ফোঁটা গুলো বসে থাকবে।
সাদা কাপড়ের মাধ্যমে মধু পরীক্ষা
নতুন বা পুরাতন এক টুকরো সাদা কাপড় নিন, সাদা কাপড়ে মধু মাখান। ২০ থেকে ৩০ মিনিট মধু মাখানো কাপড় রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, কোন প্রকার সাবান ছাড়া। যদি দাগ থেকে যায়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়। আর যদি সম্পূর্ণ দাগমুক্ত হয় তাহলে বুঝা যাবে মধু খাঁটি। খাঁটি মধুর দাগ কখনো কাপড়ে থেকে যাবে না, নকল মধুর দাগ কাপড়ে থেকে যাবে।
আপনি কি জানেন মধু যৌন ক্ষমতা বাড়াতেও একইরকম কার্যকরী? বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
প্লাস্টিক বা কাঁচের পাত্রে রেখে মধু পরীক্ষা
প্লাস্টিক বা কাঁচের জারে মধু কিছুদিন রেখে দিলে মধু যদি নকল হয় তাহলে জারের নিচে জমাট বাঁধবে এবং কালো হয়ে যাবে আর যদি খাঁটি মধু হয় বা নকল না হয়, তবে দীর্ঘদিন প্লাস্টিক বা কাঁচের জারে রেখে দিলেও মধুর নিচে জমাট বাঁধবে না এবং কালো হবে না। এ ছাড়া নকল মধুতে পিপড়া ধরবে এবং খাঁটি মধুতে পিঁপড়া ধরবে না কখনো।
হাতের আঙ্গুল দিয়ে আসল মধু পরীক্ষা
মধু যেমনি হোক, হাতে নিলে বুঝা যাবে যে কোনটি নকল অথবা খাঁটি। খানিকটা মধু আঙুলের মাথায় নিন। যদি দেখতে পান দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তবে বুঝবেন এটি নকল মধু। কারণ খাঁটি মধু বেশ ঘন হয় এবং সহজে ছড়িয়ে যায়না, নকল মধু খুব দ্রত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, সুন্দরবনের বিশেষ খলিশা ফুলের মধু একটু পাতলা হয়।
কালোজিরা ফুলের মধু পছন্দ করেন? তাহলে আমাদের এই পোস্ট থেকে জেনে নিন কালোজিরা মধুর উপকারিতা।
রং দেখে খাঁটি মধু পরীক্ষা
আবহাওয়া এবং ফুল অনুযায়ী মধুর রং এবং স্বাদ হয় একেক রকম। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে সুন্দরবন জুড়ে ফোটে খলিশা ফুল, এ সময় চাষীরা খলিশা ফুলের মধু কাটার জন্য ব্যস্ত থাকে। সে সময় সংগৃহীত মধুর রং হয় বেশিরভাগ সময় সাদা। বছরের মাঝামাঝি সময়টাতে মধুর রং আরও গাঢ় (হলুদ, বাদামি এবং লালচে) রঙের হয়ে থাকে।
ফ্রিজে রেখে ভালো মধু পরীক্ষা করার নিয়ম
ডিপ-ফ্রিজে খাঁটি মধু রাখা হলে সেটা কখনও জমাট বাঁধবে না এমনকি দানাভাবও হবে না। এর ঘন ও তরল ভাবটা থেকেই যাবে। তবে নকল মধু ফ্রিজে রাখলে জমাট বেঁধে যাবে সেই সাথে দানাভাব লক্ষ করা যাবে। সেই সাথে মধুর উপরের অংশে নকল মধুর সাদা স্তরও দেখা দেবে, যা আসলে চিনি মিশানো ছিল বা নকল। আবার আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, সব মধু জমাট বাধলে তা নকল না। সরিষা ফুলের মধু এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
সরিষা ফুলের মধু কিনবেন কিন্তু চেনার উপায় জানেন না? এই পোস্ট থেকে বিস্তারিত পড়ে নিন।
চুলায় জ্বাল দিয়ে পরীক্ষা
যে কোন একটি পাত্রে মধু নিন। যে পাত্র আগুনে দহন যোগ্য এবার সেটাকে অল্প আগুনে চুলায় জ্বাল দিন। এতে মধুটি ক্যারামেলের মতো হতে দেখা যাবে, তবে ফেনা তৈরি হবে না। অপরদিকে নকল মধু চুলায় জ্বাল দিলে বুদ্বুদের মতো ফোম তৈরি হবে এবং ফেনা দেখা যাবে। আর যদি চিনি মেশানো থাকে, তাপ দিলে মধু সম্পূর্ণ তরল হতে চাইবে না।
পরিশোধন ছাড়া খাঁটি মধু যাচাই
জেনে রাখা ভালো খাঁটি মধু পরিশোধন ছাড়া রেখে দিলে উপরের অংশে অনেকটা ফেনার মতো একটা স্তর পরে, যা ভেজাল মধুতে কখনই হয় না। আবার ভালো করে পরিশোধন করলে ফ্যানা কমে যাবে।
আমরা আমাদের পোস্টে আরও বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের থেকে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে কমেন্ট বক্সে জানান। আমরা উত্তর দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
খাঁটি মধু অর্ডার করতে নিচের অর্ডার বাটনে ক্লিক করুন
তথ্যসূত্র:
- মৌমাছির পেট খেকে যে নির্যাস বের হয় তাই মধু ১
- সেরা মধুর খেতাব অর্জন ২
- সুন্দরবনের মধুর রং গাঢ় (হলুদ, বাদামি এবং লালচে) রঙের হয়ে থাকে ৩
- খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার ফলে মধুর রঙ এবং গন্ধ বিভিন্ন হয়ে থাকে ৪
- “মানুকা মধু বিষয়ক তথ্যতীর্থ”। ২২ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।৫
- কুরআন ১৬:৬৯ | ৬