আমরা আমাদের আগের পোস্টে ঘি বানানোর নিয়ম ও ১ কেজি ঘি বানাতে কতটুকু দুধ লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা আপনাদের সাথে ঘি খাওয়ার নিয়ম ও মাখন আর ঘি এর মধ্যে পার্থক্য কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ঘি তে অনেক বেশি ক্যালরি, ফ্যাট ও নানা পুষ্টি উপাদান থাকে বলে নিয়ম মেনে ঘি খেলে আমাদের জন্য ভালো হবে।
ঘি এর পুষ্টি উপাদান
ঘি তে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, অ্যারাকিডোনিক, বুটিরিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি ১২ সহ নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ বজায় রাখে। পুষ্টিবিদগণ সবসময় আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ঘি রাখতে বিশেষ পরামর্শ দেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম ঘি তে-
- শক্তির পরিমাণ ৩৬৬০ কিলোজুল (৮৭০ ক্যালরি);
- কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ০ গ্রাম;
- ফ্যাটের পরিমাণ ৯.৫ গ্রাম;
- স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ৬১.৯ গ্রাম;
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ২৮.৭ গ্রাম;
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ৩.৬৯ গ্রাম;
- প্রোটিনের পরিমাণ ০.৩ গ্রাম;
- কালসিয়ামের পরিমাণ ৪ মিলিগ্রাম;
- আয়রনের পরিমাণ ০ মিলিগ্রাম;
- পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩ মিলিগ্রাম;
- সোডিয়ামের পরিমাণ ২ মিলিগ্রাম;
- ফসফরাসের পরিমাণ ৩ মিলিগ্রাম;
- গরুর দুধের ঘি তে বুটিরিক অ্যাসিডের পরিমাণ ৪.৫ থেকে ৫.৫ গ্রাম এবং ছাগলের দুধের ঘিতে বুটিরিক অ্যাসিডের পরিমাণ ৩.৫ থেকে ৪.৫ গ্রাম ;
- ঘি তে থাকা পানির পরিমাণ ০.২৪ গ্রাম এবং
- কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ২৫৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
আমরা আমাদের অন্য পোস্টে খাঁটি মধু কিভাবে চিনবেন এবং কথা থেকে বাজারের সেরা খাঁটি মধু কিনবেন তা নিয়ে আপনাদের জন্য আলোচনা করেছি। সেই পোস্টে আপনি আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর ভালোভাবে গোছানো পাবেন। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
ঘি খাওয়ার নিয়ম
একজন সুস্থ মানুষের দিনে ২ চামচ ঘি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। সকালের সময় খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে ১ চামচ ঘি নিয়ম অনুযায়ী খেলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাবেন। ওজন নিয়ন্ত্রণে সকালবেলা এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ১ চামচ ঘি খেলেই যথেষ্ট। ঘি খেলে তেল এড়িয়ে চলবেন। শীতকালে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিলে ঘি এর সাথে অল্প পরিমাণ গোলমরিচ মিশিয়ে নিয়ম করে খেতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের কম পরিমাণে ঘি খেতে হবে। বিকালে বা সন্ধ্যার নাস্তায় রুটি, পরোটা বা চাপাতির সাথে ঘি মাখিয়ে খেতে পারবেন। ২ চামচের বেশি নিবেন না। এছাড়া, বাড়িতে যেকোনো দেশীয় খাবার রান্নার সময় ১ থেকে ২ চা চামচ ঘি দিলে খাবারের স্বাদ অনেকগুণে বেড়ে যাবে।
রান্নার সময় ঘি খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, প্রতি ১ কাপ পরিমাণ চাল/ডালের জন্য ১ থেকে ২ চা চামচ ঘি এবং প্রতি এক পাউন্ড মাছ বা মাংসের জন্য ১ থেকে ২ টেবিল চামচ ঘি দিতে হবে। মিষ্টি তৈরি করার সময় প্রয়োজনমতো বা স্বাদ অনুযায়ী ঘি দিবেন। ঘি তে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকলেও কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে অতিরিক্ত ঘি একসাথে খাওয়া যাবে না। কিন্তু, যদি নিয়ম মেনে ঘি খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
আমরা আমাদের অন্য পোস্টে পিনাট বাটারের উপকারিতা নিয়ে আপনাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ঘি আর মাখন এর পার্থক্য
ঘি আর মাখন দুটোই দুধ থেকে তৈরি হয় কিন্তু তৈরির প্রক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান এবং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঘি আর মাখন এর পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো-
- ঘি আর মাখন এর পার্থক্য হলো দুধ জ্বাল দিয়ে দুধ থেকে সর বা চর্বি আলাদা করে মাখন তৈরি করা হয়। মাখন কে তাপ দিয়ে উত্তপ্ত করে ল্যাকটোজ এবং জল আলাদা করলে ঘি তৈরি হয়।
- ঘি তে প্রায় ১০০ ভাগ চর্বি থাকে যার বেশিরভাগই মনোআনস্যাচুরেটেড এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট। মাখনে প্রায় ৮০ ভাগ চর্বি থাকে যাতে মনোআনস্যাচুরেটেড,পলিআনস্যাচুরেটেড ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মিশ্রণ থাকে।
- ঘি তে ০.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে ও কোনো কার্বোহাইড্রেট থাকে না। মাখনে ০.৯ গ্রাম প্রোটিন ও মাত্র ০.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।
- ঘি তে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে সহ নানা প্রয়োজনীয় চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন থাকে। মাখনে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই থাকে।
- ঘি এর স্মোকিং পয়েন্ট ২৫২° সেলসিয়াস বা ৪৮৫° ফারেনহাইট। মাখনের স্মোকিং পয়েন্ট ১৭৬.৬৬৭° সেলসিয়াস বা ৩৫০° ফারেনহাইট।
- ঘি বিয়েবাড়িতে রান্না, তরকারি ভাজা, তেলের পরিবর্তে অন্যান্য রান্না বা বেকিং করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মাখন রুটিতে মাখিয়ে খাওয়া যায় বা সস এবং ডিপ তৈরি করা যায়।
- ঘি ঠিকমতো রেখে দিলে অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। মাখন বেশিদিন ভালো থাকে না, দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
- ঘি তে প্রচুর পরিমাণে (প্রতি ১০০ গ্রামে ৬১.৯ গ্রাম) স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। মাখনে ঘি এর চেয়ে কম পরিমাণে (প্রতি ১০০ গ্রামে ৫১.৪ গ্রাম) স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডও থাকে।
আসল বা খাঁটি ঘি খেলে আপনার ওজন বাড়বে, কিন্তু কোনটি আসল ও কোনটি নকল তা আপনাকে ভালোভাবে চিনতে হবে। ঠিক মাখনের ক্ষেত্রেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমাদের তিস্তা ফুড থেকে পাবনার খাঁটি গাওয়া ঘি অর্ডার করতে কল করুন +8801737084429 এই নম্বরে। আমরাই আপনাদের দিচ্ছি আমাদের খাবারের সেরা মানের নিশ্চয়তা।
বাচ্চাদের ঘি খাওয়ার নিয়ম
- বাচ্চাদের ঘি খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে খাবারের সাথে হালকা গরম পানির সাথে ২ চামচ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এতে বাচ্চাদের কাশি বা হজমে সমস্যা থাকলে তা দূর হয়ে যাবে।
- ৬ মাসের পর থেকে নিয়ম মতো বাচ্চাদের মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারে অল্প পরিমাণে ঘি খাওয়াতে হবে।
- বাচ্চাদের দৈহিক গড়ন ওইসময় থেকে বাড়তে থাকে জন্য তাদের বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। তাই ঘি খাওয়ালে ক্যালরির ঘাটতি পূরণ হবে।
- বাচ্চাদের চুলকানি, একজিমা বা ফুসকুড়ি থাকলে সেই আক্রান্ত স্থানে ঘি মাখিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। কারণ, ঘি তে থাকা এন্টিমাইক্রোবিয়াল সেই জীবাণু সংক্রমণ করতে সাহায্য করে।
- ১ বছর বয়সী বাচ্চাদের প্রতিদিন ১ চা চামচ ঘি, ২ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য ১ থেকে ২ চা চামচ পরিমাণ ঘি এবং ৩ বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য আপনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ চা চামচ ঘি খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু, চিকিৎসকদের মতে, ২ চামচের বেশি ঘি খাওয়া ঠিক না।
- অরিরিক্ত ঘি খেলে বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে এবং হজমের সমস্যা হতে পারে।
- ঘি ঠাণ্ডা কি না তা পরীক্ষা করে দেখবেন। ঘি গরম হলে তা বাচ্চাদের মুখ পুড়ে যেতে পারে।
- বাচ্চাদের অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ঘি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
প্রতিটি বাচ্চা ও তার শরীরের অবস্থা একে অপরের থেকে আলাদা। আপনার শিশুর জন্য কত ঘি উপযুক্ত তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। কিন্তু, বাচ্চাদের জন্য বাজারের অন্যান্য মধু থেকে খাঁটি বা অর্গানিক মধু খাওয়ানো ভালো। কারণ, ঘি তে চিনি, মধু বা লবণ মেশানো থাকলে তা কোনোভাবেই বাচ্চাদের দেওয়া যাবে না।
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে উন্নতমানের পিনাট বাটার ব্যবহার করে থাকি। আমাদের থেকে পিনাট বাটার নিতে +8801737084429 নম্বরে কল করুন।
ঘি দিয়ে কি কি রান্না করা যায়?
ঘি দিয়ে ভাত, পোলাও, তরকারি, ডাল, মিষ্টি (ল্যাংচা, গাজরের হালুয়া), চিড়ে, পপকর্ন ও অন্যান্য স্ন্যাকস রান্না করা যায়। এছাড়াও, ঘি দিয়ে মাংস, মাছ এবং ডিম রান্না করা যায়। ঘি মেরিনেড তৈরি করতেও ব্যবহার করা হয়। খাবারে তেলের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদে বৃদ্ধি হয়।
উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার কারণে ঘি রান্না করার জন্য একটি বিশেষ মাধ্যম। এটি কোনো ধোঁয়া উৎপন্ন করে না এবং খাবারে এক অন্য স্বাদ যোগ করে।
রাতে ঘি খেলে কি হয়?
রাতে ১ গ্লাস গরম দুধের সাথে ১ চামচ ঘি খেলে অনেক উপকার পাবেন। দুধ ও ঘি দুটোতেই ভিটামিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ও নানা ধরনের মিনারেল থাকায় আমাদের শরীরের অনেক উন্নতি হয়। রাতে ঘি খেলে তা প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
ঘি তে বুটিরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ থাকায় তা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই ঘি মস্তিষ্কের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে ভিটামিন A, E এবং K তে পরিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে এবং গাঁটের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
- ঘি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- ঘিতে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যার ফলে উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- কিছু লোকের ঘি খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
আমরা আমাদের পোস্টে আপনাদের জন্য অর্গানিক খাবারের বিষয়ে নানা ধরনের জিজ্ঞাসার যথাযথ উত্তর দেবার চেষ্টা করে থাকি। আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান এবং আমাদের থেকে উন্নতমানের ঘি নিতে চাইলে এখনই কল করুন +8801737084429 এই নম্বরে।
তথ্যসূত্র
WebMD- Ghee: Is It Good for You?