আমরা অনেকে ‘বাটার’ বা মাখন খেয়ে থাকি। এই মাখন সাধারণত দুধ থেকে তৈরি হয়। তেমনি পিনাট বাটার (Peanut Butter) আমরা চিনাবাদাম পিষে তৈরি করি এবং স্বাদ, পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির জন্য আমরা আরও নানা ধরনের উপাদান যুক্ত করি। বাংলাদেশে যারা শারীরিক ব্যায়াম বা (Gym) করে থাকেন, তারা সবাই পিনাট বাটার বা চিনাবাদামের মাখন চিনলেও দেশের অন্যান্য সাধারণ মানুষদের জন্য অনেকটা অপরিচিত। ধীরে ধীরে আমাদের সকলের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
আজ আমরা আপনাদের সাথে এই চিনাবাদামের মাখন (Peanut Butter) এর পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা, পিনাট বাটার খেলে কি হয়- আরও বিভিন্ন প্রশ্ন যা আপনাদের জানতে চান কিন্তু গোছানো কোনো উত্তর পাচ্ছেন না, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমরা আপনাদের জন্য খাবার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে থাকি। আমাদের থেকে আপনি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন। আরও জানতে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা কি এবং পিনাট বাটার খেলে শরীরে কি ধরনের পরিবর্তন হবে?
আমরা অনেকে ভাবি, চিনাবাদাম ও পিনাট বাটার এর যেকোনো একটি খেলে একই উপকার পাওয়া যাবে। কিন্তু না, পিনাট বাটার নিয়মিত খেলে এমন অনেক ধরনের উপকার পাবেন যা আপনার শরীর ও সাস্থ্যের পরিবর্তন আনবে, যেমন-
স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস হিসেবে
পিনাট বাটার আমাদের দৈনিক খাবারের তালিকায় একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে রাখতে পারেন। যারা ব্যায়াম করেন কিন্তু মাংস খান না, অর্থাৎ শাকাহারি (Vegetarian) তারা প্রোটিনের বিশেষ উৎস হিসেবে আপনি এটি খেতে পারেন। আমাদের শরীরের পেশীশক্তি বৃদ্ধি ও মেরামতে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই বাটার বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পুষ্টিকর ফ্যাটের অসাধারণ উৎস
চিনাবাদামের মাখন বা পিনাট বাটারে যে ফ্যাট বা চর্বি থাকে, সেটির বেশিরভাগই মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট; যা কোনো খারাপ চর্বি নয়। কারণ, এতে আমাদের শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি হয়, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
পিনাট বাটার হজমে সহায়তা করে
পিনাট বাটারে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে যা আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়। এই খাদ্য আঁশ আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ প্রতিরোধ করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে এটি আমাদের পাকস্থলীর সাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের রক্তে শর্করার শোষণ কমিয়ে তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং, নিয়মিত সেবনে সরিষা ফুলের মধুর মতো বেশ উপকার পাবেন।
আমরা আমাদের পিনাট বাটার এর সাথে অন্যান্য পুষ্টিকর জিনিস যেমন- উন্নত মানের খাঁটি মধু, মাখন অথবা ঘি ও পিঙ্ক সল্ট মিশিয়ে থাকি। এতে কোনোরকম রং ও ভেজাল কিছু মেশাই না কারণ আমরা আমাদের কাস্টমারদের জন্য সেরা মানের ও সাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করে থাকি।
শক্তির উৎস হিসেবে
আমাদের এই পিনাট বাটারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আপনার শরীরকে দ্রুত শক্তির যোগান দেয়। বিশেষ করে যারা ব্যায়াম করেন বা খেলাধুলা করেন তাদের ব্যস্ততার জীবনযাপনের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকা ক্যালরির পাশাপাশি প্রোটিন ও চর্বি থাকে যার জন্য আমরা দীর্ঘক্ষণ কাজকর্ম করে যেতে পারি। রাতে খেজুর খাওয়ার পাশাপাশি দিনে খেলে উপকার পাবেন।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
আমরা অনেকে ভেবে থাকি যে, পিনাট বাটার খেলেই কি কোলেস্টেরল বাড়ে? উত্তর হলো- না। আপনি দৈনিক পরিমাণমতো পিনাট বাটার খেলে আপনার কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে না, বরং, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হবে। সুতরাং, আপনি নিয়মিত পরিমাণে অর্থাৎ দিনে ২ থেকে ৩ চামচ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
কিন্তু আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এতে বেশি পরিমাণে বা অতিরিক্ত চিনি বা লবণ না থাকে। তাই কেনার সময় ভালো মানের, সঠিকভাবে তৈরি করা (চিনি ও সাধারণ লবণ ছাড়া) পিনাট বাটার দেখে নিবেন। আমরা কোনো ধরনের চিনি ও সাধারণ লবণ মেশাই না। আমরা পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা এর কথা চিন্তা করে এতে মধু ও পিঙ্ক সল্ট মিশিয়ে থাকি যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
আপনারা আমাদের কাছে ১০০ ভাগ খাঁটি পিনাট বাটার পাবেন। আমরা আমাদের নিজস্বভাবে বানানো সেরা মানের পিনাট বাটার দেবার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকি। আমাদের অর্ডার করতে ওয়েবসাইটে পিনাট বাটার এর পেইজে ভিজিট করুন অথবা কল করুন +8801737084429 এই নম্বরে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চেয়ে এতে ওমেগা-৩ এর পরিমাণ কম থাকে (প্রতি ১ টেবিল চামচে মাত্র ০.৪ গ্রাম) থাকে কিন্তু নিয়মিত খেলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। পিনাট বাটারে যে ওমেগা- ৩ পাওয়া যায় তার নাম ‘আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড’। এতে মস্তিস্কে কার্যকারিতা বাড়ার সাথে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ, প্রদাহ কমা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
ভিটামিন সরবরাহ করে
পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা হিএবে এতে থাকা নানা ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, কে, ডি, ই ইত্যাদি পাবেন। এখন আপনি সকালবেলা টোস্টের সাথে বা পাউরুটি এর সাথে মাখিয়ে খেলে ভিটামিন এ শরীরে সরবরাহ হবে। সাথে ডিম খেলে ভিটামিন ডি শোষণ করবে। বিভিন্ন ফল ও অন্যান্য খাবার যোগ করলে আপনি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাবেন।
পিনাট বাটার খেলে আমাদের ওজন বাড়বে কি না, বাড়লেও কেনো বাড়বে তা নিয়ে বিস্তারিত এখানে ক্লিক করে পড়ুন।
দেহের হাড় মজবুত করে
পিনাট বাটারে (Peanut Butter) এ থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের হাড়ের জন্য অনেক উপকারী। কারণ, আমরা জানি, ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ও এর গঠনে সাহায্য করে এবং ফসফরাস ক্যালসিয়ামের সাথে মিশে হাড়ের কাঠামো তৈরি করে। এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে।
ক্ষুধাভাব কমিয়ে কাজ করার শক্তি বাড়ায়
আমাদের অনেকের বেশি ক্ষুধা লাগে। এতে, অনেকে ক্লান্ত হয়ে পরি এবং ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। চিনাবাদামের মাখনে খাদ্য আঁশ থাকায় তা সেবন করলে আমাদের ক্ষুধাভাব কমে যায় এবং শক্তি পাওয়ার কারণে অনেক সময় ধরে আমরা কাজ করতে পারি। পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
প্রতিদিন পরিমাণমতো চিনাবাদামের মাখন (Peanut Butter) খেলে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে। বাদাম আমাদের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, এতে ফাইবারের ভালো উৎস থাকায় টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও মোটা হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এতে থাকা চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও ভিটামিন আমাদের ক্রনিক রোগের সমস্যা কমে যায়।
কালোজিরা ফুলের মধুর বিশেষ উপকারিতা ও খেলে কি কি হয় তা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
পিনাট বাটারে কত ক্যালরি? অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি?
যুক্তরাষ্ট্রের Food Data Central Search Results এর মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম পিনাট বাটারে প্রায় ৫৯৭ ক্যালরি থাকে। ১ টেবিল চামচ পিনাট বাটারে প্রায় ৯৫.৫ ক্যালরি থাকে।
অর্থাৎ, ১০০ গ্রাম পিনাট বাটারে-
- চর্বি থাকে ৫১.১ গ্রাম;
- প্রোটিন এর পরিমাণ ২২.৫ গ্রাম;
- খাদ্য আঁশ এর পরিমাণ ২.৯১ গ্রাম;
- কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ ২২.৩ গ্রাম;
- স্টার্চ এর পরিমাণ ৩.৬৩ গ্রাম;
- ডায়েটারি ফাইবার থাকে ৪.৮ গ্রাম;
- ভিটামিন ই এর পরিমাণ ৯.১১ মিলিগ্রাম;
- ফসফরাস রয়েছে৩৩৯ মিলিগ্রাম;
- ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ ১৬৯ মিলিগ্রাম;
- পটাসিয়াম আছে ৫৬৪ মিলিগ্রাম;
- সোডিয়াম এর পরিমাণ ৪২৯ মিলিগ্রাম;
- জিংক এর পরিমাণ ২.৫৪ মিলিগ্রাম এবং
- স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ ১০.১ গ্রামসহ নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ থাকে।
সুতরাং, পিনাট বাটারের মাধ্যমে আপনি চাইলে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন বা কমাতে পারবেন।
বাজারে ভেজালের ভিড়ে খাঁটি মধু কিভাবে যাচাই করবেন? বিস্তারিত পড়তে এখানে যান।
যে বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে
পিনাট বাটার ওজন কমাতে ও অন্যান্য নানা উপকার করতে পারে কিন্তু আমরা প্রতিবারই বলে থাকি যে, কোনো খাবারই বেশি খাওয়া উচিত নয়। এতে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালরি থাকে বলে শরীরে বাড়তি চাপ পরে এবং ক্ষতিকর চর্বি জমে যায়। বেশি পরিমাণে খেলে আপনার হজমেও সমস্যা হবে। এজন্য-
- অবশ্যই পরিমাণমতো বুঝে শুনে খাবেন অর্থাৎ ২ থেকে ৩ টেবিল চামচের (১৬-৩২ গ্রাম) বেশি খাবেন না।
- কোনরকম চিনিযুক্ত বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত পিনাট বাটার এড়িয়ে চলুন। আমাদের পিনাট বাটারে কোনো রকম চিনি মেশানো হয় না।
- আপনি সুষম খাবারের অংশ হিসেবে যেমন আপেল, কলা, সবজি, পাউরুটি বা টোস্টের সাথে খেতে পারেন।
- আপনার যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা খুবই জরুরী।
আমরা আগামী পোস্টে এই পিনাট বাটার নিয়ে অন্য বিষয়ে যেমন- পিনাট বাটার খেলে কি মোটা হওয়া যায় ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করবো এবং আপনাদের কাছে তুলে ধরবো। এছাড়া আপনারা আমাদের যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা উত্তর দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
তথ্যসূত্র
U.S. DEPARTMENT OF AGRICULTURE– Food Data Central Search Results
Very Well Health– Is Peanut Butter Good for You? 5 Reasons It’s a Yes
Krishi Jagran- 10 Side Effects of Peanut Butter You Should Know
Medicine Net- Is It OK to Eat Peanut Butter Every Day? 4 Health Benefits
সাধারণ জিজ্ঞাসা
পিনাট বাটার প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত?
আপনার প্রতিদিন ১ থেকে ২ টেবিল চামচ পিনাট বাটার খেলেই শরীরের ঘাটতি পূরণ হবে অর্থাৎ আপনি দিনে ১৬ থেকে ৩২ গ্রাম পিনাট বাটার খেতে পারেন।
পিনাট বাটার খেলে কি কোলেস্টেরল বাড়ে?
না। নিয়মিত ও পরিমাণমতো খেলে কোলেস্টেরল বাড়বে না। তবে, আমাদের পিনাট বাটার অন্যান্য দের থেকে সুস্বাদু হওয়া সত্ত্বেও বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
ওজন কমাতে কি প্রতিদিন পিনাট বাটার খাওয়া যাবে?
অবশ্যই। ওজন কমাতে প্রতিদিন পিনাট বাটার খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এতে অনেক বেশি ক্যালরি থাকে বলে আপনাকে ডায়েট মেনে চলতে হবে, নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।