আমরা অনেকে খলিশা ফুলের মধুর ব্যাপারে জানতে চাই। আবার অনেকে খলিশা ফুলের মধু কি তা জানি না। আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য জানিয়ে দিচ্ছি যে, সুন্দরবনে বিশেষ মৌসুমে যে প্রধান প্রাকৃতিক চাকের মধু পাওয়া যায় সেটি হলো খলিশা ফুলের মধু। এখানে অন্যান্য ফুলের মধুও পাওয়া যায়, তবে খলিশা ফুলের খাঁটি মধুই বেশি জনপ্রিয়। আজ আমরা আপনাদের জন্য খলিশা ফুলের মধু চেনার উপায় ও এর বিশেষ উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
সুন্দরবনের মধুকে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক মধু হিসেবে ধরা হয়। কারণ, আমাদের দেশে অন্যান্য ফুলের মধু চাষ করে সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু সুন্দরবনের মধু জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। তাই মধুর বাজারে এই সুন্দরবনের মধুর চাহিদা অনেক। খলিশা ফুলের পাওয়া এই মধুকে ‘সুন্দরবনের আশীর্বাদ’ও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত, এই মধুতে গেওরা, গরান, পশুর ফুলের মধুর মিশ্রণ থাকে। তবে খলিশা ফুল বেশি ফোঁটায় মার্চ মাসের শেষের দিক হতে জুন মাস পর্যন্ত মৌয়ালরা নিজেদের দল বেঁধে মধু সংগ্রহ করতে জঙ্গলে চলে যায়। আমরা আগের পোস্টে যেমন বলেছি, “যেসব মৌসুমে যে ফুল সবচেয়ে বেশি ফোটে, সেই ফুলের নামানুসারে মধুর নাম রাখা হয়”, তাই এই মৌসুমে খলিশা ফুলের মধু বেশি ফোটে জন্য একে খলিশা ফুলের মধু বলা হয়।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ফুলের মধু কখন পাওয়া যায় বা সংগ্রহ করা হয়?
একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফুল ফোটা, মৌচাক তৈরি ও মৌমাছির মধু সংগ্রহ; সব এক সাথে চলতে থাকে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময়ের বিভিন্ন পর্যায়ে ফোটে লতা, খলিশা ও গরানের ফুল। এই ফুলগুলোর শেষের দিকে অর্থাৎ গরানের শেষ সময়ে কেওড়া, বাইনসহ আরো নানা রকমের ফুল আসে। সুন্দরবনের মধু মৌসুম চলে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। এইসময় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক খলিশার মধু বেশি পাওয়া যায়। তারপর গরান মধু এবং পরবর্তীতে বাইন, কেওড়ার মধু পাওয়া যায়। এই খলিশা ফুলের মধু নির্দিষ্ট সময়ে ফোটে এবং মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে। একই সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে গরান, লতা ফুল এবং গরানের শেষে কেওড়া, বাইন ফুল সহ আরও নানা ফুলের মধু পাওয়া যায়।
আমরা আমাদের আগের পোস্টে এই খলিশা ফুলের মধু এর প্রাথমিকভাবে চেনার উপায় সম্পর্কে বলেছি এবং আরো বলেছিলাম যে, আমরা আলাদাভাবে পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আমরা আমাদের একমাত্র বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক খলিশা ফুলের মধু চেনার উপায় বা এর বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবো।
খলিশা ফুলের মধু চেনার উপায়
- খলিশা ফুলের মধুর স্বাদ অন্যান্য মধুর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে।
- খলিশা ফুলের মধু দেখতে অন্যান্য মধুর চেয়ে অনেকটা পাতলা ধরনের হয়। অন্যান্য মধুর মতো ঘন হয় না।
- আপনি যতই রেখে দেন, এটি কখনো জমে যাবে না। এমনকি ফ্রিজে রেখে দিলেও অন্যান্য মধুর মতো এই মধু জমবে না।
- অনেক বেশি সুস্বাদু হলেও কর্দমাক্ত ও নোনা পানির জমি হওয়ায় এখানে পাওয়া খলিশা ফুলের মধুর স্বাদ অনেক টা টক ও মিষ্টি ধরনের হয়। তবে নিঃসন্দেহে এর স্বাদ অতুলনীয়। খলিশা ফুলের মধু চেনার উপায় হিসেবে আমরা একে ধারণায় রাখতে পারি।
- খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য হলো, এই মধুতে বাজে গন্ধ বা কটু গন্ধ হবে না।
- মধুতে ঝাকি লাগলেই ফ্যানা তৈরি হবে। এর আসল কারণ কি তা নিয়ে আমরা আমাদের খলিশা ফুলের মধুর প্রোডাক্ট পেইজে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি।
- এই মধু তে অনেকটা ‘হলুদ রঙের গাদ’ বা প্রলেপ জমে। কেননা চাক কেটে একদম নির্ভেজাল ভাবে এটি সংগ্রহ করা হয়। মধু কিনলে অবশ্যই প্রলেপ বা গাদ উপর থেকে ফেলে দিয়ে আমাদের খেতে হবে।
- অনেকের কাছে এই মধু আবার কিছুটা আখের রসের মতো মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে, আমারও এমনটাই লেগেছিল।
আরও নানাভাবে আপনি খাঁটি মধুর পরীক্ষা করতে পারবেন। এতে আপনি আরও ভালো করে যাচাই করতে পারবেন। সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু চেনার উপায় হিসেবে এই পরীক্ষাগুলো বেশ কাজে আসবে।
এক্ষেত্রে, আপনি যদি আমাদের থেকে প্রাকৃতিক চাকের মধু কিনেন তবে আপনার মান নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। কারণ, আমরা আপনার কাছে একদম নির্ভেজাল মধু সরবরাহ করবো। আমাদের উপর শুধু আপনারা বিশ্বাস রাখবেন। আমাদের থেকে যদি মধু অর্ডার অথবা প্রি-অর্ডার করতে চান, তাহলে এখনই কল করুন +01737084429 নম্বরে। আমরা আপনাদের জন্য বাজারের সেরা মধু ডেলিভারি করে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
খলিশা ফুলের মধুর উপকারিতা
- খলিশা ফুলের মধু খেলে শরীরে শক্তির সঞ্চার হয়।
- অন্যান্য মধুর মতো এই ফুলের মধুতেও শর্করা থাকার কারণে হজম প্রক্রিয়াতে বেশ উপকার হয়। খলিশা ফুলের মধুর উপকারিতা হিসেবে মধুতে থাকা ‘ডেক্সট্রিন’ শরীরে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে যা ‘পেটরোগা’ মানুষের জন্য খুবই উপকারী।
- মধতে থাকা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ‘কোষ্ঠকাঠিন্য‘ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতি ভোরবেলা ১ চা-চামচ খলিশা ফুলের মধু পান করলে অম্লত্ব দূর হবে।
- খলিশা ফুলের মধুতে অনেক পরিমাণে কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও লৌহ থাকার কারণে রক্তে ‘হিমোগ্লোবিন’ বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য এক গ্লাস গরম পানির সাথে ১ চামচ বা ২ চামচ মধুর সাথে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকারিতা হিসেবে শরীরের রক্ত ও রক্তনালী পরিস্কার হবে।
- এই খলিশা ফুলের মধু শ্বাসকষ্ট ও ফুস্ফুসের নানা রোগের জন্য একটি উপকারী সমাধান। সকালে খালি পেটে খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন।
- এই মধু খেলে রাতে ঘুম ভালো হবে এবং দেহের ক্লান্তি দূর হবে। আপনি ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস পানির সাথে ২ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।
- দাতের ক্ষয় কমাতে এবং দাতে পাথর জমা থেকে বাঁচতে মধু অনেক উপকারী। এতে দাত পড়ে যাওয়ার ঝুকিও কমে যায়।
- খলিশা মধু সেবনের ফলে আমাদের অরুচিভাব, বুকে জালাপোড়া করা, বমি বমি ভাব দূর হয়ে যায়।
- আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এই মধু অনেক ভালো কাজ করে। আমাদের শুধু নিয়মিত এর সেবন করতে হবে। আপনি চাইলে খেজুরের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
- মেয়েদের মুখের রূপচর্চার জন্য ত্বককে মসৃণ রাখতে এই মধুর ব্যবহার হয়।
- এই মধু খেলেও অন্যান্য মধুর মতো আমাদের শরীরের ওজন কমবে।
- আপনি যদি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা দুইবার ২ চামচ মধুর সাথে ১ চামচ রসুনের রস মিশিয়ে খান তাহলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যাবে। তবে আপনি সকালে খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
- অন্যান্য মধুর মতো এই মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
এই খলিশা ফুলের মধু বাচ্চাদের জন্য খুব উপকারী। তাছাড়া দ্রুত হজমক্রিয়ার উন্নতির জন্য এই মধু সকলের কাছে খুবই প্রিয়। এছাড়া অন্যান্য মধুর মতো এই মধুর উপকারিতা প্রায় একই রকম।
সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুই কি পদ্ম মধু?
খলিশা ফুলের মধু আসলে পদ্ম মধু নয়। আমাদের দেশে বসবাসরত সুন্দরবনের স্থানীয়রা খলিশা ফুল এর রঙ দেখতে সাদা হয় বলে এই ফুলের মধুকে ‘পদ্ম মধু’ বলে থাকেন। বাংলাদেশে আপনি সরাসরি পদ্ম ফুলের মধু পাবেন না। পদ্ম মধু আলাদাভাবে পাওয়া যায়, কিন্তু এই ফুলের মধুর দাম অনেক বেশি হয় এবং বাইরের দেশ থেকে কিনে নিতে পারেন।
সাধারণত এসব উপায়েই আপনি সুন্দরবনের সেরা প্রাকৃতিক মধু অর্থাৎ খলিশা ফুলের মধু চিনতে পারবেন। প্রাকৃতিক খলিশা ফুলের মধুর উপকারিতা অন্যান্য চাষের মধুর চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। পরবর্তীতে আমরা আপনাদের জন্য সরিষা ফুলের মধু নিয়ে প্রায় সব কিছু বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনারা কমেন্ট বক্সে আপনাদের ব্যক্তিগত মতামত আমাদের জানাতে পারেন।
এই মধু খেলে কি আসলেই উপকার পাবো?
যেহেতু এই খলিশা ফুলের মধু একদম প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, তাই আপনি অবশ্যই উপকার পাবেন। তবে আপনাকে নিয়মিত এবং পরিমিত অনুসারে খেতে হবে। আপনি চাইলে মধু খালি খেতে পারেন, আবার খেজুর বা বাদামের সাথে মিশিয়েও খেতে পারবেন।
খলিশা ফুলের মধু কোথায় পাওয়া যাবে?
আপনি আমাদের থেকেই অর্থাৎ তিস্তা ফুড থেকে বাজারের সেরা দামে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক খলিশা ফুলের মধু কিনতে পারবেন। এছাড়াও আমাদের কাছে আপনি একদম খাঁটি মধুর জন্যও প্রি-অর্ডারও করতে পারবেন।
তথ্যসূত্র
Medicine Net: 11 Health Benefits of Eating a Spoonful of Honey Every Day
Baylor Scott & White Health: The bittersweet truth about honey’s health benefits
Verywell Health: Is Raw Honey Good for You?
Isha: 8 Benefits of Honey and Its Traditional Uses
Vinmec: 10 surprising health benefits of honey