ভেজালের বাজারে আসল ও খাঁটি মধু চেনার উপায় কি? কিভাবে বুঝবেন যে প্রতারিত হচ্ছেন কি না?
আমরা সকলেই ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মধুর নানা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। কিন্তু কোন মধু কিনবো আর কোনটা কিনবো না এই নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। অনেকে পরিচিত ব্র্যান্ডের উপর ভরসা করলেও সবসময় ভালো মধু পান না এবং চিনতে না পেরে প্রতারিত হন। এজন্য আমাদের প্রথমে খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। মধু হাতে পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই কীভাবে চিনে ফেলতে পারবেন তা জানলে ডেলিভারি নেওয়ার সময় প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। আপনি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে আসল নকল এর যাচাই করতে পারবেন।
আমরা আপনাদের জন্য খাঁটি মধু সংগ্রহ করে থাকি। আমাদের কাছ থেকেই পাবেন সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারের সেরা মানের মধু। আমাদের থেকে মধু নিতে পেইজে অর্ডার করুন অথবা +8801737084429 এই নম্বরে কল করুন।
বাজারের খাঁটি মধু চেনার উপায়
১। হাতের আঙুলে নিলে যদি আঙুলের উপর থেকে নিচের দিকে বেয়ে ধীরে ধীরে গড়ায়, তাহলে এটি আসল বা খাঁটি মধু। কিন্তু দ্রুত গড়িয়ে পরলে এটি নকল।
২। খাঁটি মধু পানিতে এক ফোঁটা মধু ঢালার পর যদি তা পানির তলা তে চলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি খাঁটি মধু। পানিতে ভেসে থাকলে এটি নকল।
৩। একটি ম্যাচের কাঠি মধুতে ডুবিয়ে আগুন ধরালে যদি জ্বলে উঠে, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে আসল মধু। না জ্বললে হাতে থাকা মধুটি ভেজাল।
৪। মধু ঘন বা আঠালো হলে এটি খাঁটি মধু। কম আঠালো বা পাতলা ধরনের হলে নিশ্চিত হতে হবে যে মধুটি নকল।
আমরা আমাদের অন্য পোস্টে মধু কিভাবে পরীক্ষা করবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
৫। অরিজিনাল মধু পানিতে মেশালে ছোট দানা আকারে পানিতে ছড়িয়ে পড়বে। না ছড়ালে মধুটি ভেজাল।
৬। আসল বা খাঁটি মধুতে ফ্যানা জমতে দেখা যাবে না। কিন্তু, সরিষা ফুলের মধুতে ফ্যানা জমবে।
৭। একটি সাদা কাপড়ে মধু ঢালার পর যদি এর আধাঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পর কাপড় টি ধুয়ে ফেলার পর যদি দাগ না থাকে, তাহলে এটি শতভাগ খাঁটি মধু। কাপড়ে দাগ থেকে গেলে বুঝতে হবে এটি নকল।
৮। বাইরে রেখে দিলে এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান থাকার কারণে পিঁপড়ে ধরবে না। পিঁপড়ে ধরলে বুঝবেন মধুতে চিনি বা অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় পদার্থ মেশানো আছে। এটি খাঁটি মধু চেনার সহজ উপায়।
৯। মধু তে টক গন্ধ করলে অবশ্যই এটি ভেজাল। বিশেষ মধু ছাড়া অন্যান্য জাতের মধুতে টক গন্ধ হয় না।
খলিশা ফুলের মধু ও হালকা ঘনত্বের লিচু ফুলের মধু তে এক ধরনের ফ্যানার মতো গাদ জমবে। তাছাড়া, মধু পুরনো হলে, বা গাড়ীতে করে দূর থেকে নিয়ে আসলেও ফ্যানা হতে পারে। এ অবস্থায় আপনি ফ্যানা ফেলে দিয়ে খেতে পারবেন।
আপনি আমাদের থেকে মধু অর্ডার দিলে বাজারের আসল মধু চেনার জন্য আর কোন ঝামেলা পোহাতে হবে না। কারণ, আমরা আপনাকে দিচ্ছি ১০০ ভাগ নির্ভেজাল মধুর নিশ্চয়তা। আপনি চাইলে আমাদের শপ পেইজে অর্ডার করতে পারেন অথবা আমাদের কল করে পরবর্তী মৌসুমের মধুর জন্য +8801737084429 কল করে প্রি-অর্ডার করতে পারেন। আমরা দ্রুতই আপনাদের জন্য অন্যান্য জাতের মধু সংরক্ষণ করবো।
মধু কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাদেশে মধু ৬ প্রকার। যেমন, সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু, সরিষা ফুলের মধু, লিচু ফুলের মধু, কালোজিরা ফুলের মধু, সুন্দরবনের গেওয়া ফুলের মধু ও পশুর ফুলের মধু। খলিশা ফুলের মধু কে পদ্ম মধু বললেও আসলে সেটি পদ্ম মধু নয়। বাংলাদেশে সুন্দরবনের মধুই হচ্ছে প্রাকৃতিক মধুর একটি প্রধান উৎস।
মধুর প্রকারভেদএখন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় হানিপ্ল্যান্ট গাছের খলিসা ফুলের মধু বা পদ্ম মধু, পশুর ফুলের মধু, সরিষা ফুলের মধু, কালিজিরা ফুলের মধু, সুন্দরবনের গেওয়া ফুলের মধু ও প্রাকৃতিক ফুলের মধু। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মধুর কোনো নির্দিষ্ট প্রকার হয় না। কেননা, মৌমাছি শুধুমাত্র একটি জাতের ফুল থেকে মধু নেয় না। মৌমাছি বিভিন্ন জাতের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। যেখানে মধু পাওয়া যায়, সেখান থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। কিন্তু, যেসব মৌসুমে যে ফুল সবচেয়ে বেশি ফোটে, সেই ফুলের নামানুসারে মধুর নাম রাখা হয়। যেমনঃ সুন্দরবন থেকে বিশেষ সময়ে যে মধু নেওয়া হয় তাকে ‘খলিশা ফুলের মধু’ বলে।
এই সময়ে সুন্দরবনে এই ফুল সবচেয়ে বেশি ফোটে এবং এই ফুলের মধুর চেনার ধরন ও বর্ণ অন্যান্য মধুর থেকে আলাদা হয়। এরপর, মৌমাছিরা গরান ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। এটি দেখতে লালচে বর্ণের হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পাওয়া যায়। এছাড়াও, সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গরান ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়। জুন মাসের দিকে, গেওয়া ফুলের মধু সংগ্রহের মাধ্যমে মৌসুম শেষ হয়। এটি পাতলা রঙের এবং হালকা স্বাদের হয়ে থাকে।
এমন করেই মার্চ মাসে লিচু ফুলের মধু, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে সরিষা ফুলের মধু, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে কালোজিরা ফুলের মধু, অক্টোবর মাসে বড়ই ফুলের মধু, এপ্রিল থেকে মে মাসে গরান ফুলের মধু (এই মধু খলিশা ফুলের পরেই আসে) আমাদের দেশে বেশি পাওয়া যায়। এই মধুগুলো আমাদের দেশে বেশ পরিচিত। আবার দেশের বাইরে আমরা নানা নামের ও ধরনের ফুলের মধু দেখতে পারি যেগুলো জনসাধারণের কাছে তেমন একটা পরিচিত না। যেমনঃ মানুকা মধু, এলভিস মধু (সবচেয়ে দামী মধু), ইউক্যালিপটাস মধু, ক্লোভার মধু, আলফালফা মধু ও ল্যাভেন্ডার মধু।
সকালে মধু খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা নিয়ে আমরা অন্য একটি পোস্টে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিভিন্ন ফুলের মধু আলাদাভাবে চেনার উপায় কি?
বিভিন্ন ফুলের মধু আলাদাভাবে চেনার জন্য প্রথমে আমাদের ওই ফুলের মধূর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলাদাভাবে জানতে হবে। তাই এখানে বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রাথমিকভাবে বেশ পরিচিত ৪ টি মধু কিভাবে সহজে চিনতে পারবেন তা আপনাদের জন্য বর্ণনা করছি-
- খলিশা ফুলের মধু ফুলের মধু খুবই সুস্বাদু, হালকা টক মিষ্টি ধরনের ও দেখতে অন্যান্য মধুর চেয়ে হালকা হয়।
- লিচু ফুলের মধুর ঘ্রাণ লিচু ফলের মতো হয় এবং দেখতে হালকা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। যদি ঘনত্ব পাতলা হয় তবে ফেনা হতে দেখা যাবে, কিন্তু বেশি হলে দেখা যাবে না। এই ফুলের মধু জমতে দেখা যায়। ঘন হলে বেশি জমবে এবং হালকা হলে কম জমবে।
- সরিষা ফুলের মধু আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মধু। এটি ঠাণ্ডায় সরিষা ফুলের মধু সম্পূর্ণ জমে প্রায় ক্রিমের মতো হয়ে যায়। অনেকে একে ‘ক্রিস্টাল হানি’ নামেও চিনে থাকেন। এর ঘনত্ব ঘন হোক কিংবা পাতলা, এই মধু জমে যাবে। এমনকি সংগ্রহের সময় এই ফুলের মধু তে ফ্যানা হতে দেখা যাবে। মধু চেনার বিশেষ উপায় হিসেবে শুধু সরিষা ফুলের মধুর জমাট বাধা কে ধরতে পারি।
- কালোজিরা ফুলের মধু এর স্বাদ, গন্ধ ও ঘনত্বের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। তবে এটি ঘন বা পাতলা দুই ধরনেরই পাওয়া যায়। এই মধু খেতে অনেকটা খেজুরের গুঁড়ের মতো হয়ে থাকে। যদি অন্যান্য ফুলের মধু কেউ না মিশিয়ে থাকে (যেমনঃ সরিষা মধু), তাহলে এই ফুলের মধু জমবে না। তবে এই মধু অপেক্ষাকৃত বেশি দামের হয়।
আমরা খাঁটি ঘি কিভাবে চিনবো তা নিয়েও খুঁটিনাটি বর্ণনা করেছি। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
এই পোস্টে আমরা সাধারণত মধুর আসল ও নকল মধু চিনতে মূল কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে পারি এবং অন্যান্য বেশ পরিচিত মধু প্রাথমিক ভাবে কিভাবে চিনবো তা নিয়ে আলোচনা করেছি। শীঘ্রই আমরা কোন ফুলের মধু নির্দিষ্টভাবে কিভাবে চিনবেন, ওই মধুর বিশেষ উপকারিতা গুলো কি কি তা নিয়ে আলাদা করে অন্যান্য পোস্টে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো। আরও কিছু জানতে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।
তথ্যসূত্র
WikiHow- How to Verify the Purity of Honey
Times of India- How to check the purity of honey at home
Lybrate- Honey – How To Spot If It Is Fake Or Not?
Medical News Today- Honey: Health Benefits, Uses and Risks
Wikipedia- Honey Bee
সাধারণ জিজ্ঞাসা
মধু কি বসে যায়?
হ্যাঁ। বিশেষ ক্ষেত্রে মধু জমে যায়। যেমন, সরিষা ফুলের মধু ঠাণ্ডাতে জমে যাবে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তরল থেকে দানাদার হয়ে যাওয়ার অবস্থা কে 'Granulation' বা 'স্ফটিকায়ন' বলে। তবে অমিশ্রিত কালোজিরা ফুলের আসল মধু জমবে না।
মধু কি কি কাজে লাগে?
মধু অনেক ধরনের কাজেই আমরা ব্যবহার করতে পারি। যেমনঃ সর্দি-কাশি দূর করে, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে, কোথাও পুড়ে গেলে মধু লাগাতে পারেন যাতে জ্বলন কম হয়। এমন আরও নানা কাজে আপনি মধু ব্যাবহার করতে পারবেন।
মধু খেলে কি মোটা হওয়া যায়?
না। মধু খেলে মোটা হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ, মধুতে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলো শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন মধু টি খাঁটি মানের হয় আর বেশি খাওয়া যাবে না। আপনি চাইলে মধুর সাথে খেজুর খেতে পারেন। এতে শরীরে শক্তি পাবেন এবং ওজনও বাড়াতে পারবেন।