রাতে যদি আপনি অন্যান্য খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে এখন থেকে খেজুর কে আপনার ঘুমানোর আগে খাবারের তালিকা তে রাখতে পারেন। এটি সত্যিই খুব উপকারী। যদি আপনি ঘুমানোর আগে মাত্র দু’টি খেজুর খান, তাহলে আপনার শরীরের ক্লান্তি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাবেন। আর যদি আপনি দুধের সাথে খেজুর দিয়ে খান, তবে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার শরীরের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে নিয়মিত খেজুর খেলে যে যে বিশেষ উপকারগুলো পাবেন তা হলো-
- রাতে খেজুর খেলে আমাদের দেহের পেশী শক্তি বৃদ্ধি হয়।
- খেজুর শরীরের জয়েন্টের ব্যথা কমায় ও রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে।
- রাতে খেজুর খেলে আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- নিয়মিত রাতে খেজুর খেলে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তের হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়ায়।
- অনিদ্রার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- হার্টের নানা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হৃদরোগের এর ঝুঁকি কমায়।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রসব বেদনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।
- আমাদের শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
নিয়মিত রাতে পরিমাণমতো খেজুর খেলে আপনার স্বাস্থ্য ও শরীরের নানারকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আমরা রাতে খেজুর খেলে আমাদের শরীরে যে যে প্রয়োজনে কাজে আসবে তা উপরের বিষয়গুলো থেকে আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে বিস্তারিত তুলে ধরছি-
দেহের পেশী শক্তি বৃদ্ধি করে
বিশেষজ্ঞদের (Recommended Dietary Allowance) মতে, ৬০ কেজি ওজনের একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৪৮ গ্রাম প্রোটিন খেলে সবচেয়ে ভালো হয় এবং ৭৫ কেজি ওজনের একজন সক্রিয় ব্যক্তির প্রতিদিন ৬০-৯০ গ্রাম প্রোটিন নিতে পারবেন। আমাদের দেহ ও স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকতে হলে রাতে দুধের সাথে খেজুর খেলে প্রোটিনের ঘাটতি অনেকটা দূর হবে । এতে থাকা প্রোটিন আমাদের হাড়ের ও পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে এটি ভালো ফলাফল দেয়।
জয়েন্টের ব্যথা ও রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে
খেজুর খেলে শরীরের জয়েন্টের ব্যথা ও রক্তস্বল্পতার সমস্যা সাড়াতে সাহায্য করে। এটি লৌহ ও ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় রাতের খাবার হিসেবে আপনি খেজুর খেতে পারেন। এই লৌহ শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত রোগীর জন্য উপকারী। আপনি ঘুমানোর আগে মাত্র ৩টি খেজুর গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে দারুণ উপকার পাবেন কেননা, খেজুর দুধে ভিজিয়ে রাখলে এর ক্যালসিয়ামের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এটি কেবল হাড় মজবুত করবে না, বরং হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে জয়েন্টের ব্যথাও কমিয়ে দেবে।
আপনারা তিস্তা ফুড থেকে বাজারের সবচেয়ে ভালো মানের খেজুর পাবেন। অর্ডার করতে আমাদের ওয়েবসাইটের পেইজে ভিজিট করুন অথবা +8801737084429 নম্বরে কল করে আপনার অর্ডারটি নিশ্চিত করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
খেজুরে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) ৪২ থাকে যা অন্যান্য মিষ্টি খাবারের চেয়ে তুলনামূলক কম মিষ্টি হয়। আর এই জিআই এর পরিমাণ কম হওয়ার জন্য নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা তাড়াতাড়ি বাড়বে না। খেজুরে থাকা ফাইবারও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই ফাইবার এর কারণে হজমপ্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং শর্করা শোষণের হার কমে।
খেজুর এ ম্যাগনেসিয়াম থাকায় রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। খেজুরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বলে শরীরের কোষের ক্ষতি রোধ করে, বিশেষ করে ডায়াবেটিসের জটিলতা কমায়। তবে পরিমিত পরিমাণে রাতে খেজুর খেতে হবে যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে। আমরা আমাদের বয়স অনুসারে কাদের কত পরিমাণ খেজুর খেলে ভালো হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আমরা আমাদের অন্য পোস্টে পুরুষদের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
খেজুরে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে, তাতে প্রোস্টেট গ্রন্থির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। এতে পুরুষের বীর্যের উৎপাদন বৃদ্ধি হয় এবং এর গুণগত মান উন্নত হয়। এই ফলে থাকা জিঙ্ক পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্ট্যামিনা এবং ইস্ট্রোজেন ও স্টেরলের মতো হরমোন বাড়াতে যে অ্যামিনো এসিড এর ভূমিকা রয়েছে, সেই অ্যামিনো এসিড এর পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ৮.৪২ গ্রাম থাকে। রাতে নিয়মিত খেজুর খেলে পেটের ক্যান্সার ও আলসারের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এমনকি আফ্রিকার মতো দেশে মানুষের খেজুর খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে এটি পুরুষদের জন্য উপযোগী।
শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
খেজুরে থাকা পটাশিয়াম শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এই পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের বিপরীতে কাজ করে। রক্তনালী প্রসারিত করে। এবং এটি প্রসারিত হলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তচাপ কমে যায়। খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
গরম ভাতের সাথে খেলে কি কি উপকার পাওয়া যাবে তা বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
রক্তের হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে থাকা আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্ত কণিকায় অক্সিজেন বহন করে। আয়রন শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করে এবং শরীরে অক্সিজেনের পরিবহন বাড়ায়। তাছাড়া ফলিক অ্যাসিড রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে, ভিটামিন সি আয়রন শোষণ করে এবং খেজুরে থাকা খনিজ পদার্থের কারণে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
অনিদ্রার সমস্যা কমিয়ে দেয়
অনেকেই আছি যারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। এজন্য আমরা দিনে অন্যদের মতো ঠিকমতো কাজ করতে পারি না বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম দুধ এর সাথে ১ থেকে ২ টি খেজুর খেলে সহজে ঘুম আসবে। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দুধে থাকা ‘ট্রিপটোফ্যান’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে ‘সেরোটনিন’ তৈরি হয়। এই সেরোটনিন স্নায়বিক উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে এবং খেজুরের থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম সহজে ঘুম আনতে সাহায্য করে থাকে।
তবে, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তে ঘটা অনিদ্রার সমস্যার সমাধান হয় না। এরকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে এগুলো মেনে চলতেই হবে।
সকালে খালি পেটে মধু খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী? বিস্তারিত জানতে পড়ুন- সকালে খালি পেটে মধুর উপকারিতা
হার্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে ও হৃদরোগের এর ঝুকি কমায়
আমরা অনেককে প্রায়ই হৃদরোগের ঝুঁকি তে ভুগতে দেখে থাকি। সাধারণত কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যাবার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি অনেক কম বয়স্ক মানুষও এই সমস্যার মধ্যে পড়েন। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হয় যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, ডায়াবেটিস, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। তবে আপনি রাতে খেজুর খেয়ে ঘুমালে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী
গর্ভবতী মহিলারা রাতে খেজুর খেলে অনেক উপকার পাবেন। যেমন শক্তি সরবরাহ: খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং রাতের বেলায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যেমনঃ খেজুরে ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থ থাকে; যা মা ও শিশুর জন্য অনেক জরুরি। খেজুরে বিদ্যমান ফাইবার হজমক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এর মতো রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
মহিলাদের প্রসব এর ব্যথা কমাতে ‘অক্সিটোসিন’ প্রসবের সময় প্রসব বেদনা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যা খেজুরে প্রায় ৬০০ IU পরিমাণ থাকে। তাছাড়াও খেজুর খেলে শরীরে শক্তি সরবরাহ হয় এবং পুষ্টি বাড়ে যা মা ও শিশুর জন্য খুবই জরুরী। প্রতি রাতে গর্ভবতী মহিলাদের ২-৩ টির বেশি খেজুর খাওয়া উচিত নয়। রাতে ঘুমানোর প্রায় ১-২ ঘণ্টা আগে খেজুর খাওয়া উচিত। খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। তবে, আপনার অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ঠিক কতটি খেজুর খাওয়া উচিত তা নির্ধারণ করে নিবেন।
বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়তে পারেনঃ গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় মায়েদের কেনো খেজুর খাওয়ানো উচিত?
ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ২৭৭ ক্যালরি থাকে এবং ১ টি খেজুরে প্রায় ২৩ ক্যালরি থাকে। সুতরাং, কম খাবার খেয়েও আমরা আমাদের ওজন বাড়াতে পারি। তবে ওজন বাড়ানোর জন্য একসাথে অনেক খেজুর খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেহেতু খেজুরে ক্যালোরির পাশাপাশি অন্যান্য আরও অনেক উপাদান থাকে, তাই অতিরিক্ত খেলে পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আমরা যে মেডজুল খেজুর বিক্রি করে থাকি তা নিয়মিত খেতে পারলে, আপনি রাতে অল্প খেলেও সাইজ অনেক বড় হওয়ায় ওজন বাড়াতে পারবেন। আবার, পাশাপাশি আপনি ওজন কমাতেও সাহায্য করবে যদি আপনি ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন। যেহেতু অল্প খেলেই অনেক ক্যালরি আপনি পাবেন, সেহেতু ওজন কমানোর জন্য ডায়েট চার্টে খেজুর কে রাখতেই পারেন।
আপনি যদি নিয়ম করে রাতে এবং সাথে দিনে খেজুর সেবন এর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং সাথে পরিপূর্ণ ডায়েট মেনে চলেন তাহলে মোটামুটি ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ভালো ফলাফল পাবেন। রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কি নিয়ে কোন রকম প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।
তথসুত্র
Are you getting too much protein? – Mayo Clinic Health System
9 Impressive Health Benefits of Eating Dates
9 Foods That May Help Increase Hemoglobin
Trying to lose weight? 5 dry fruits that can help you with weight loss
সাধারণ জিজ্ঞাসা
খেজুর ভিজিয়ে রেখে খেলে কি হয়?
খেজুর ভিজিয়ে খেলে হজমশক্তি বাড়বে। এজন্য আপনি সারারাত পানিতে (৮ থেকে ১০ ঘণ্টা) ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খেয়ে ফেলুন। এসব নিয়ম মেনে চলা কষ্টকর, তবে যদি মেনে চলতে পারেন তবে বেশ উপকার পাবেন।
খেজুর খাওয়ার পর পানি খেলে কি হয়?
খেজুর খাওয়ার পরপরই পানি খেলে তা ফাইবারের সাথে মিশে পেটে একটি জেলের মতো এক ধরনের পদার্থ তৈরি করে। এতে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং পেট ফাঁপা, অম্বল, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আপনি ২০-২৫ মিনিট পর পানি খেলে উপকার পাবেন।
খেজুর খেলে কি শরীরে রক্ত হয়?
হ্যাঁ। যেহেতু খেজুরে আয়রন আছে, সেহেতু তা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে এবং হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। খালি পেটে খেজুর খেলেও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
কোন খেজুর খেলে ওজন বাড়ে?
আমরা সাধারণত যত বেশি ক্যালরি নিব, আমাদের ওজন তত বাড়বে। এজন্য মেডজুল খেজুর খেলে আমাদের ওজন বেশি বাড়বে, শরীরও ভালো থাকবে।