আমরা আমাদের আগের কয়েকটি পোস্টে কালোজিরা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আজ থেকে আমরা আগামী পোস্টগুলোতে আপনাদের সাথে মেথি খাওয়ার নিয়ম ও মেথি নিয়ে নানা প্রশ্নের সঠিক ও সহজ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মেথির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। শরীরের নানা সমস্যা সমাধান হবে শুধু নিয়ম করে মেথি খাওয়ার ফলেই, অনেকটা যাদুর মতো। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মেথির ভিতর রয়েছে ভিটামিন এ, বি ৬, কে, ফোলিক অ্যাসিড, নিয়াসিন, রাইবোফ্লাভিন ইত্যাদি। খনিজের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম কপারসহ ইত্যাদি নানা ধরনের উপাদান। এই মেথি চুলের যত্নের জন্য খুবই উপকারী উপাদান হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত।
আমরা এই মেথি খাওয়ার মাধ্যমেও অনেক উপকারী ফলাফল পেতে পারি। এজন্য মেথি খাওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মেথি খাওয়ার নিয়ম
এই মেথি সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আপনি আলাদা করে এই মেথি নিয়ম করে খেতে পারবেন। মেথি খাওয়ার নিয়ম হিসেবে আপনাকে কিছু নিয়ম মানতে হবে, যাতে ফল ভালো পান।
- প্রথমে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি নিয়ে নিন।
- এরপর সারারাত সেই পানিতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন। সারারাত ধরে ভিজিয়ে রাখার পর সকাল বেলা খালি পেটে সেই মেথি মেশানো পানি পান করুন।
- সকাল বেলা উঠার পর মেথি ভেজানো পানির সাথে একটু লেবুর রস ও মধু মিশিয়েও পান করতে পারবেন।
- শুধু মেথি চাইলে সকালে চিবিয়েও খেতে পারবেন। এর পাশাপাশি রুটি, ঝোল, পরোটা, তরকারি, সালাদ বা মাছের সাথে মেথি ব্যবহার করতে পারবেন।
- একটি বাটিতে পানি নেয়ার পর তাতে ২ চামচ মেথি দানা দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে শুধু পানিটুকু ছেঁকে পান করলে কয়েকদিনে ভালো ফলাফল পাবেন।
- মেথির পেস্ট গোলাপজল দিয়ে তৈরি করে নিতে পারবেন। এই পেস্ট ব্যবহারের ফলে ব্রণ, দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ ও ত্বকের বলিরেখা দ্রুত সেরে যাবে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
এছাড়াও মেথি খাওয়ার নিয়ম সঠিক থাকলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। যেমনঃ
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
মেথিতে দ্রবণীয় ফাইবার থাকার কারণে নিয়মিত সকালে খালি পেটে মেথি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কৃমির সমস্যা দূর করে
অনেকেই আছেন যারা কৃমির সমস্যাতে ভোগেন। এই সমস্যাটি আরও অন্যান্য রোগব্যাধির জন্ম দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে কৃমির সমস্যা বেশি দেখা যায়। কিন্তু, মেথি এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খেলে বা বাচ্চাদের অল্প করে খাওয়ালে কৃমি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খাওয়ার অভ্যাস করলে ফাইবারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ায় ফলে ক্ষুধা কমে আসে, এতে এই উপাদান স্বাভাবিকভাবেই শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এজন্য অতিরিক্ত ওজন ও বাড়তি চর্বি নিয়ে সমস্যায় পড়লে আপনি মেথির খেতে পারেন।
পেটের ব্যথা দূর করে
যারা অনেকেই পেটের ব্যথায় অনেক কষ্ট করে থাকেন। তারা সেই কষ্টের মুক্তির জন্য অনেক ধরনের খাবার বা ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু, নিয়মিত মেথি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকসহ বাকি সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
চিয়া সিড এর অপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই পোস্টে ক্লিক করুন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
মেথির দানা সকালে নিয়ম করে খেলে ক্যান্সারের মতো রোগের প্রকোপও কমায়। কারণ, মেথি ক্যান্সারের টিস্যু বাড়তে দেয় না। তবে নিয়মিত খেলেই ফল পাওয়া যায়।
কালো দাগ দূর করে
নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে শরীর থেকে ছোট ছোট ছোপ ধরনের কালো দাগ উঠে যায়। এই মেথি সকালে বা বিকেলে প্রতিদিন খাওয়ার ফলে ত্বক সুন্দর রাখতেও বেশ সহায়তা করে।
চিয়া সিডের উপকারিতা, অপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়ুন।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
গ্যাস্ট্রিকের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে বা ১ গ্লাস পানির সাথে মেথি ভিজিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে। প্রথমে একটি গ্লাস পানি নিয়ে তাতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে ১০ মিনিট পর সেই পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিক কমার সম্ভাবনা বাড়ে। স্বাদ বাড়াতে পরিমাণমতো মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে পানিটি পান করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি মিলবে। গবেষণামতে, মেথি ভেজানো পানি সকালে খালি পেটে খেলে প্রায় ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে ২ বার মেথির রস পান করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যায়। আস্ত মেথি খেতে না চাইলে পেস্ট করে ভাতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
ঘি এর বিশেষ উপকারিতা জানতে আমাদের লেখা এই পোস্টটি দেখে আসুন।
মেথি মশলা বা শাক হিসেবে, সাথে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির জন্য অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়। মেথি ভেজানো পানি খেলে রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত অসুখগুলো কমাতে সাহায্য করে। কচি পাতা, মশলা এবং ডগা শাক হিসেবে এই মেথি খুবই জনপ্রিয়। মেথির গুঁড়ো প্রতিদিন ১ চা চামচ থেকে ২ চা চামচ প্রায় ৩ মাস খেলে ভালো উপকার পাবেন। প্রতি সকালে ও রাতে আধা চা চামচ করে দিনে ১ বার মেথি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
মেথি ভিজিয়ে খেলে কি হয়?
গামেথি ভিজিয়ে খেলে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সহায়তা করে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, প্রদাহ কমায়, মাসিক চক্রের সমস্যা সমাধান করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
মেথি কতটুকু খেতে হবে?
গমেথি চায়ের সাথে ১ চা চামচ বীজ ১ কাপ গরম পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে ছেঁকে দিনে দুইবার পান করুন। ১ চা চামচ মেথি গুঁড়ো ১ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে পান করুন। স্বাদ অনুযায়ী স্যুপ, সালাদ বা অন্যান্য খাবারে যোগ করুন।
প্রতিদিন কতটুকু মেথি বীজ খাওয়া উচিত?
প্রতিদিনে ১ থেকে ২ চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়। নাহলে আপনি নানারকম সমস্যায় পড়তে পারেন।
মেথি কতদিন খেলে সুগার কমে?
টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে ১৫ গ্রাম মেথি গুঁড়ো বীজ যুক্ত খাবারের পরে রক্তে গ্লুকোজের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, তিন মাস ধরে দিনে দুবার ২.৫ গ্রাম মেথি খেলে সুগার কমে যায়।
তথ্যসূত্র
WebMD- Fenugreek – Uses, Side Effects, and More
Healthline- Fenugreek: An Herb with Impressive Health Benefits
Health- Fenugreek: Health Benefits, Uses, and Side Effects
MedicalNewsToday- Fenugreek: Benefits and effects