গত পোস্টে আমরা সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায় ও এই মধু খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত ও সুন্দরভাবে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে আমরা বিভিন্নভাবে এই ফুলের মধু চেনার উপায়, কিভাবে নিয়ম করে এবং কি কি উপায়ে খাবেন, তা নিয়েও বিস্তারিত ধারণা দিয়েছিলাম। আজ আমরা সরিষা ফুলের মধুর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
আমরা আপনাদের জন্যই বিভিন্ন খাবারের নানা পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও নিয়ম নিয়ে লিখে থাকি। আপনারা আমাদের পোস্ট থেকে সবসময় আপনাদের নির্দিষ্ট জিজ্ঞাসা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনাদের অন্যান্য কিছু জানার থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
সরিষা ফুলের মধু কি জমে যায়?
হ্যাঁ, সরিষা ফুলের মধুতে অন্যান্য মধুর তুলনায় বেশি সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ থাকে যা স্ফটিক তৈরি করে। ফলে মধু কম তাপমাত্রায় জমে যায়। তাছাড়া, সরিষা ফুলের মধুতে ফ্রুক্টোজ এবং ম্যালটোজ এর মতো অন্যান্য শর্করা থাকে যা স্ফটিকীভূত হতে পারে এবং মধু জমে যেতে পারে। সরিষা ফুলের মধুতে অন্যান্য মধুর তুলনায় কম পানি থাকে জন্য এটি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে, গরমকালে এই মধু একটু কম জমবে।
সরিষা ফুলের মধুর উপকারিতা
সরিষা ফুলের মধু এর শক্তিশালী ঔষধি গুণাগুণের জন্য সকলের কাছে পরিচিত। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলিতে সমৃদ্ধ থাকে বলে শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সরিষা ফুলের মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সরিষা ফুলের মধু ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে রক্ত পরিষ্কার রাখে এবং এর অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সরিষা ফুলের মধুতে থাকা অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী গাঁট, বাত এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যান্য ফুলের উপকারিতার মতো এই সরিষা ফুলের মধুর উপকারিতাও প্রায় একই। কিন্তু, সব মধুরই নিদিষ্ট কিছু উপকারিতা থাকে। সরিষা ফুলের এই মধুর অন্যান্য বিশেষ উপকারিতাগুলো হলো-
- সরিষা ফুলের মধু শরীরের অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- সরিষা ফুলের মধু হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সরিষা ফুলের মধু সহায়তা করে।
- সরিষা ফুলের মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- আলসার ও গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে।
- স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- শরীরের ক্যান্সার এর ছড়ানো প্রতিরোধ করে।
- সরিষা ফুলের মধু শরীরের গ্লাইকোজেনের নিয়ন্ত্রণ করে।
- সরিষা ফুলের মধু রক্তে হিমগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
- ঝুঁকিপূর্ণ পচনশীল ঘা প্রতিরোধ করতে সরিষা মধু সাহায্য করে।
- রূপচর্চার ক্ষেত্রে এই সরিষা ফুলের মধু ব্যবহার করা যায়।
উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে নিচে আমরা বিস্তারিতভাবে এ সম্পর্কিত আরও তথ্য তুলে ধরছি-
অ্যালার্জি এর সমস্যা দূর করে
সরিষা ফুলের মধুতে অন্যান্য মধুর তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ‘ডায়াস্টেজ উৎসেচক’ থাকে। এই ডায়াস্টেজ শরীরের হিস্টামিনকে ভেঙ্গে ফেলে, যা এলার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য এক কার্যকরী রাসায়নিক হিসেবে কাজ করে। এজন্য সরিষা ফুলের খাঁটি মধু আমাদের শরীরের অ্যালার্জির ও এর লক্ষণ যেমন- হাঁচি, কাশি, চোখে জ্বালা করা এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি তীব্র অ্যালার্জি থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সরিষা ফুলের মধু বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণের জন্য আমাদের দেশে বেশ পরিচিত। এই মধু তে থাকা অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো বেশি পরিমাণে থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে অর্থাৎ শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতি সকালে খালি পেটে মধু খেলে এর অনেক উপকার পাবেন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
সরিষা ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে আমাদের হৃৎপিণ্ডের কোষকে রক্ষা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই মধুতে থাকা প্রদাহ- বিরোধী উপাদান আমাদের শরীরের রক্তনালীর ক্ষতির দিক থেকে বাচায়। অনেক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, বেশি পরিমাণে ‘LDL’ থাকা সাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সরিষার ফুলের মধু আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ (LDL- Low-Density Lipoprotein) এর মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL- High-Density Lipoprotein) এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
দৃষ্টিশক্তি, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখে
সরিষার মধুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকায় তা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন-এ আমাদের চোখের রেটিনা, কর্নিয়া ও অন্যান্য টিস্যুগুলো কে সুস্থ রাখে। মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের চোখের কোষগুলিকে ফ্রী র্যাডিকেল এর বিশাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই ফ্রি র্যাডিকেল চোখের বয়সের সাথে সম্পর্কিত অসুস্থতা, যেমন- ম্যাকুলার ডিজেনারেশন(Macular Degeneration) এবং ক্যাটারাক্টের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মধুতে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ থাকে বলে আমাদের দেহের স্নায়ু ও কোষ সুদৃঢ় হয়। সরিষার ফুলের মধু স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে, কোষের মেরামত ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ফলে, স্মৃতি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
আপনারা আমাদের কাছে ১০০ ভাগ খাঁটি মধু পাবেন। আমরা আপনাদের কাছে বাজারের সেরা ও ভালো গ্রেডের মধু দেবার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকি। আমাদের অর্ডার করতে আমাদের ওয়েবসাইটে সরিষা ফুলের মধু এর পেইজে ভিসিট করুন অথবা কল করুন +8801737084429 এই নম্বরে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আমাদের দেশে ক্যান্সার খুবই ভয়াবহ একটি রোগের নাম। এতে আমাদের শরীরের কোষগুলো কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু, এই সরিষা মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য কোষের ক্ষতি কমিয়ে দেয় যা পরিবেশে ছড়ানো বিষাক্ত পদার্থ, ধূমপানের কারণে হতে পারে। কিন্তু, আমাদের মধু সেবনের পাশাপাশি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা যেমন- নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরী। গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার মধু স্তন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। তবে, এ নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। আপনি রাতে খেজুরের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাবেন।
হিমগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
মধু তে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের তৈরিতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন বি৬ ও ফোলেট আমাদের দেহের লোহিত রক্তকণা তৈরিতে সহায়তা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লোহিত রক্ত কণিকার ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম। রাতে খেজুর এর সাথে মধু খেলে আরও বেশি উপকার পাবেন। রক্তস্বল্পতা রোধ করতে মধু অনেক উপকারী। তবে, আপনার অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পচনশীল ঘা প্রতিরোধ করে
দুর্বল শিশুদের মুখের ভেতর এক ধরনের পচনশীল ঘা হয় যা “আফথাস” নামে পরিচিত। মধুর প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শিশুদের মুখের ঘায়ের সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে এবং মুখের জ্বালাভাব কমায়।
রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার
মধুতে হিউম্যাকটেন্ট যৌগ রয়েছে যা আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং মুখের উপরিভাগের সৌন্দর্য বজায় রাখে। এতে করে আমাদের ত্বক দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে এবং বার্ধক্যের ছাপ পরবে না। আপনি চাইলে প্রতিদিন সকাল বেলা রং চা বা দুধের এর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এছাড়া, রোজ ফেসপ্যাক হিসেবে দুই চামচ মধু লাগিয়ে নিন। এতে করে আপনার মৃত কোষ গুলো দূর হবে এবং ত্বকে ভাঁজ কম পরবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
অন্যান্য মধুর মতো সরিষা ফুলের এই মধুতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন বি- কমপ্লেক্স থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন ১ চা চামচ মধু পান করেন, তাহলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হবে এবং শরীরকে সতেজ করবে। একটি কথা উল্লেখ্য যে, মধু আমাদের শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে; কিন্তু আমাদের শরীরে কোন রোগ দেখা দিলে তা গুরুতর হবার আগে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এরপর, আপনি এই মধুকে এক প্রকার ওষুধ হিসেবেও খেতে পারেন।
এছাড়াও নানা ছোট-বড় সমস্যা যেমন- আলসার ও গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা, পাকস্থলীর আন্ত্রিক রোগ, ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচির বৃদ্ধি, জিহ্বার জড়তা দূরীকরণ, গ্লাইকোজেন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান মধুর মাধ্যমে হয়। সরিষা ফুলের মধু আমাদের দেশে অন্যান্য মধুর চেয়ে একটু সহজে পাওয়া যায়। তাই আমরা এই মধু সংগ্রহ করে রাখতে পারি এবং নানা উপকারে আনতে পারি।
পরবর্তী পোস্টে আমরা আপনাদের জন্য পিনাট বাটারের উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করবো। এছাড়া আপনি আরও যা জানতে চান, কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
সরিষা কি উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো?
হ্যাঁ, সরিষা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে নিয়াসিন বা ভিটামিন বি৩ থাকায় কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সরিষা শরীরের রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।