আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধরনের মধু পাওয়া যায় তার মধ্যে সরিষা ফুলের মধু ও কালোজিরা ফুলের মধু অন্যান্য ফুলের মধুর চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। অনেকে এই মধুর গ্রেড নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। এই ফুলের মধুসহ অন্যান্য মধুও বেশি সময় ধরে মৌচাকে রেখে দিলে মধুর গুণগত মান ও এর গ্রেড ভালো হবে। আমরা আমাদের অন্য পোস্টে খাঁটি মধু চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হলো- কালোজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য ও কিভাবে খেলে আমরা এর আসল সুফল পাবো।
কালোজিরা ফুলের মধু কখন সংগ্রহ করা হয়?
আমাদের দেশে কালোজিরা ফুলের মধু সাধারণত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে মার্চ মাসের ভেতর সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে সংগ্রহের সময়ের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন আবহাওয়া উষ্ণ হলে ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিকে হতে পারে, আবার ঠাণ্ডা পরিবেশ বজায় থাকলে মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকে শুরু হতে পারে। এই ফুলের মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময় বোঝার জন্য আমাদের কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন-
- যখন বেশিরভাগ কালোজিরা গাছে ফুল ফোটে এবং এটি নীল রং ধারন করে, তখনই মধু সংগ্রহের আসল সময়।
- আপনি যদি দেখতে পান প্রচুর পরিমাণে মৌমাছি কালোজিরা গাছে ঘুরে বেরাচ্ছে, তখন আপনার বুঝে নিতে হবে যে সময় হয়ে গেছে।
- তাছাড়া নির্দিষ্ট এলাকায় অনেক অভিজ্ঞ মৌমাছি পালক বা কৃষকদের সাথে কথা বলে, তাদের থেকে পরামর্শ নিয়েও খুব ভালোভাবে মধু সংগ্রহ করতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে যে, সতর্কতার সাথে মধু সংগ্রহ করবেন, যাতে মৌমাছিরা পর্যাপ্ত পরিমাণ মধু জমা করতে পারে। আমাদের পরিবেশের সঠিক ভারসাম্য রক্ষার্থে মৌমাছি ও অন্যান্য পরাগায়নকারীদের ক্ষতি করা উচিত নয়।
কালোজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায়
আমাদের অন্যান্য ফুলের মধুর মতো কালোজিরা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য বা চেনার উপায়ও আছে। কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে আপনি সহজেই এই মধু চিনতে পারবো। কালোজিরা ফুলের মধুর প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য হলো-
- স্বাদঃ কালোজিরা ফুলের মধুর স্বাদ অনেকটা খেজুরের গুঁড়ের মতো মনে হয়।
- রংঃ কালোজিরা ফুলের মধুর রং কিছুটা গাঢ় কালচে রঙের হয়।
- গন্ধঃ এই মধুর গন্ধ খুবই সুন্দর হয়। অনেকে একে মনোমুগ্ধকর বলে মনে করে থাকেন।
- ঘনত্বঃ কালোজিরা ফুলের মধুর ঘনত্ব অন্যান্য মধুর চেয়ে একটু বেশি হয়। তবে এটি অবশ্য আবহাওয়ার উপরও নির্ভর করে।
আমরা আপনাদের বুঝতে সুবিধার জন্য আরও কিছু তথ্য যোগ করে নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেমন-
স্বাদ
আমরা অবশ্যই সবাই খেজুরের গুড় খেয়েছি। কালোজিরা ফুলের মধু যদি আপনি ভালো মানের টা খান, তাহলে আপনি ঠিক খেজুরের গুড়ের স্বাদই পাবেন। তাই আপনি মধু চেখে খুব অভিজ্ঞ না হলে খুব একটা পার্থক্য করতে পারবেন না। কিন্তু, আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে খেজুর ও মধু সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। এই মধুর স্বাদ খুবই মিষ্টি হয়।
রঙ
আমাদের দেশে উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের সেরা কালোজিরা ফুলের মধুর রঙ অনেকটা তরল গুড়ের মতো গাঢ় কালচে রঙের হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, মধুর রঙ পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশে মধুর রঙ গাঢ় হয়। সব মৌমাছি এক প্রজাতির হয় না। তাই বিভিন্ন মৌমাছির প্রজাতি বিভিন্ন রঙের মধু তৈরি করে। কোনোটি গাঢ় হয়,আবার কোনোটি হালকা গাঢ় রঙের হয়। মধু সংগ্রহ করার সময় ওইখানের আশেপাশের পরিবেশের অবস্থা (যেমন- ধুলোবালি, পোকামাকড়) মধুর রঙকে প্রভাবিত করে।
গন্ধ
কালোজিরা ফুলের মধুর গন্ধ খুবই আকর্ষণীয় এবং মনকে মুগ্ধ করে দেয় বলে বর্ণনা করা হয়। এই ফুলের মধুর গন্ধ অনেক মানুষের কাছে মিষ্টি, উষ্ণ এবং মশলাযুক্ত ধরনের মনে হয়। আবার কেউ কেউ এটিকে গুড়ের গন্ধের সাথে তুলনা করে, স্বাদ গুড়ের মতো হলেও এর গন্ধ মোটেও গুড়ের গন্ধের মতো হয় না। যদি আপনি গুড়ের গন্ধ পান, তাহলে বুঝবেন মধুতে ভেজাল মেশানো আছে। আবার কেউ কেউ এতে হালকা লেবুর সুগন্ধও পায়।
ঘনত্ব
আমাদের দেশের কালোজিরা ফুলের মধুর ঘনত্ব সম্পূর্ণ নির্ভর করে আশেপাশের আবহাওয়া, মধুর পরিপক্কতা, মৌচাষির উপর ও পরিস্থিতির উপর। এই মধুর ঘনত্ব অন্যান্য পাওয়া মধুর তুলনায় বেশি হতে পারে। কারণ, এতে কম জলীয় উপাদান থাকে। মধুর ঘনত্বকে RI (Refractive Index) দিয়ে পরিমাপ করা যায়। সাধারণ মধুর (RI) ১.৪৮ থেকে ১.৫০ এর ভেতর হয়ে থাকে। তবে কালোজিরা ফুলের মধুর (RI) এর পরিমাণ ১.৫২ থাকে। আমাদের দেশের মধু তে ১৮ থেকে ২৫% পর্যন্ত জলীয় উপাদান থাকে। মধুতে জলীয় উপাদান যত বেশি কম হবে মধু তত বেশি ঘন হবে। মধুর ঘনত্ব বেশি হলে তা দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। ঘন মধু আমাদের গলা ব্যথা এবং কাশির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে সহায়ক হতে পারে।
কালোজিরা ফুলের মধু খাওয়ার নিয়ম
আসলে কালোজিরা ফুলের মধু খাওয়ার তেমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। কিন্তু, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন সকালে দুই বেলা খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আপনি যদি বিশেষ করে প্রতি সকালে খালি পেটে ১ বা ২ চামচ মধু খেতে পারেন। তাছাড়া রাতে আপনি খাবার খেয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর মধু খেলে উপকার পাবেন। আমরা আমাদের পোস্টে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাচ্চাদের জন্য বা যারা গর্ভবতী রয়েছেন তাদের জন্য এই নিয়ম পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, অনিয়মিতভাবে বা ভুলভাবে খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি মধুর সাথে বাদাম বা অন্য পুষ্টিকর খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে (যেমন- হানি নাট) বেশি উপকার পাবেন।
নকল কালোজিরা ফুলের মধু চেনার উপায়
আপনি একটু সচেতন হলেই আসল ও নকল মধু চিনে নিতে পারবেন। এজন্য আমরা আপনাদের সুবিধার্থে খাঁটি মধু পরীক্ষা করার নিয়ম নিয়ে লিখেছি। নকল মধু চেনার উপায়গুলো হলো-
- সাধারণত খাঁটি কালোজিরা ফুলের মধু জমতে দেখা যায় না। তবে যখন কালোজিরা ফুলের পাশাপাশি ধনিয়া ফুল ও অন্যান্য ফুলের মধুর মিশ্রণ থাকে, তখন এই মধু মাঝে মাঝে জমে যেতে দেখা যায়।
- নকল মধু দেখতে কালচে রঙের হয়।
- খেতে সুস্বাদু হয় না। কস কস অনুভূত হয় এবং ভেজাল মধুতে ঝাঁঝ বেশি থাকে।
- এর গন্ধ বাজে হয়। খাঁটি মধুর মতো খেজুরের গুঁড়ের মতো গন্ধ করে না।
- এই মধুর ঘনত্ব কমবেশি হতে পারে।
- আমাদের জন্য ভেজাল মধু চেনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলে কখনো ফ্যানা জমে না এবং দীর্ঘসময় ধরে রেখে দিলে নিচের তলানিতে চিনির মতো জমে থাকে।
- ভেজাল মধু যত পুরনো হবে, মধুর স্বাদ তত বেশি খারাপ হতে থাকবে এবং শেষে দুর্গন্ধ ছড়াবে।
আমরা আপনাদের জন্য খাবার সম্পর্কে বিভিন্ন জিজ্ঞাসার গোছানো উত্তর দিয়ে থাকি। ধীরে ধীরে আমরা প্রায় সব ধরনের খাবার নিয়ে আপনাদের নানারকম জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। আপনারা আরও কিছু জানতে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। আমাদের কোনো প্রোডাক্ট কিনতে এখনই কল করুন এই +8801737084429 এই নম্বরে।
পরবর্তী পোস্টে আমরা কালোজিরা ফুলের মধু এর নানা উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
তথ্যসূত্র
WebMD – Black Seed: Benefits, Nutrition, Uses & Health Insights
RxList – Black Seed