গর্ভাবস্থায় মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পটাশিয়াম, আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি সিক্স, ফোলেইট, লৌহ ইত্যাদি থাকে যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য খুবই উপকারী। খেজুরে থাকা ‘কার্বোহাইড্রেইট’ একটি প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি গর্ভাবস্থায় মা কে দ্রুত শক্তির যোগান দেয়, শরীরের দুর্বলতা কমায় এবং সতেজ ও সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে। খেজুরে উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লাভানয়েড ও ফেনোলিক যৌগ সমৃদ্ধ থাকে বলে এটি কোষের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর সুস্থ রাখতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত সকালে ও রাতে খেজুর খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
আপনি আমাদের অন্য পোস্টে খেজুরের ক্যালরি ও বিশেষ উপকার নিয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় মায়ের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে উপরের বিষয়গুলো আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত বর্ণনা করবোঃ-
প্রসব বেদনার ব্যাথা কমায়
নিয়মিত খেজুর খেলে মহিলাদের বেদনাদায়ক ‘লেবার পেইন’ অনেকটা কম হয়। নিয়মিত খেজুর খেলে ইউটেরাসের সংবেদনশীলতা কমে তা শক্তিশালী হয়।
শরীরে রক্ত উৎপাদন করে
সন্তান জন্মদানের সময় মা দের শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে যায়। এতে মহিলাদের শরীর দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি নানা জটিলতা দেখা যায়। এজন্য, নিয়ম করে খেজুর খেলে শরীরে দ্রুত রক্ত তৈরি হয় এবং শক্তির সঞ্চার হয়।
জরায়ুর পেশি শক্তিশালী করে
খেজুরে ‘অক্সিটোসিন’ নামক এক ধরনের হরমোন থাকে যা জরায়ুর পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোন প্রসবের সময় প্রসব বেদনা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। ২০১৮ সালে “Journal of Obstetrics and Gynaecology” তে প্রকাশিত একটি গবেষণার মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ৬০০ IU অক্সিটোসিন থাকতে পারে।
হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে
খেজুরে থাকা ‘ম্যাগনেসিয়াম‘ ও ‘ভিটামিন কে‘ শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে।
গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
অনেক সময় গর্ভবতী নারীদের বাচ্চার ওজন সহজে বেড়ে ওঠে না। এতে তারা নানা রকম দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন। অনেকে আবার প্রচুর পরিমাণে বমি করার কারণে বাচ্চার শারীরিক উন্নতি বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি ততটা ভালো হয় না। নিয়মিত খেজুর সেবনের ফলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি হয় এবং শিশুর শারীরিক পুষ্টি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে।
আমাদের থেকে ভালো ও খাঁটি মানের খেজুর কিনতে পেইজ টি ভিজিট করে আপনার অর্ডারটি নিশ্চিত করুন। আমরা আপনাদের জন্য সেরা খেজুর সরবরাহ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জন্মগত ত্রুটি বা বিশেষ সমস্যা এড়ায়
আমরা যত যাই বলি না কেন, কোন মা যদি তার সন্তানকে তার জন্মগত ত্রুটি বা বিশেষ সমস্যা নিয়ে জন্ম দিতে চান না। তাই মা দের উচিত, জন্মের প্রথম থেকেই তার সন্তানের জন্য বিশেষ খেয়াল রাখা। পুষ্টিকর খাবার ও নিয়ম করে চললে তা এড়ানো সম্ভব।
সার্ভিক্স নরম করে
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রতিদিন ৬০-৮০ গ্রাম খেজুর খাওয়ার ফলে সার্ভিক্স নরম হতে সাহায্য করে। নরম সার্ভিক্স প্রসবের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এর ফলে অনেক সময় কৃত্রিমভাবে কিংবা ওষুধ দিয়ে প্রসব ব্যথা সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয় না।
হাঁপানি ও কাশির সমস্যা কমায়
নিয়মিত খেজুর খেলে হাঁপানি ও কাশির ঝুঁকি কমে যায়। এতে যেসব মহিলা গর্ভবতী রয়েছেন এবং এমন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অনেক উপকার হয়।
চুল পড়ার সমস্যা কমায়
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়। খেজুর আয়রন এর একটি ভালো উৎস হওয়ায় এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, তাই স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে চুল পড়া কম হয়। যদিও এই নিয়ে তেমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে
নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। এতে গর্ভবতী মা এর শরীরের পাশাপাশি মনও বেশ আনন্দময় থাকে যা তার অনাগত সন্তানের সুন্দর গঠন ও ভবিষ্যতের জন্য অনেক উপকারী।
মধু খেলে কি হবে এবং খালি পেটে মধু খেলে কি উপকার পাবেন তা বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা বাজারের সেরা খেজুর সরবরাহ করে থাকি। আমাদের থেকে খেজুর নিতে ভিজিট করুন আমাদের শপ পেইজ এ।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের কেনো খেজুর খাওয়ানো উচিত?
খেজুরে ‘ফোলেইট’ নামক উপাদান থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় মায়েদের খেজুর খাওয়ানো উচিত। এই ফোলেইট বলতে ‘ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি নাইন বা ভিটামিন বিসি’ কে বোঝায়। খেজুরে ফ্রুক্টোজ থাকে যা দ্রুত ভেঙে যায় এবং মা দের রক্তে শর্করার মাত্রার পরিবর্তন না করে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে। খেজুরে এক ধরনের ‘ল্যাক্সেটিভ’ উপাদান রয়েছে যা প্রসব শ্রমকে সহজ করে। তাই খেজুর সকলের জন্য প্রয়োজন হলেও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব জরুরী।। খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. রহিনি পাটিল এর মতে, “গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কেননা এটা উচ্চ শর্করাযুক্ত।” বিশেষ করে মেডজুল খেজুর মায়ের জন্য খুব উপকারী।
তথ্যসূত্র
Jhon Hopkins Medicine – Nutrition During Pregnancy | Johns Hopkins Medicine
NHS – Have a Healthy Diet in Pregnancy
Mayo Clinic –Pregnancy Diet: Focus on These Essential Nutrients
UNICEF: What to eat when pregnant | UNICEF Parenting
সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ
খেজুর খেলে কি শরীরে রক্ত হয়?
হ্যাঁ। যেহেতু খেজুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, সেহেতু নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তস্বল্পতার সমস্যাও কমবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন?
এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মায়েদের খাদ্য তালিকায় আমাদের অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতিও খাবার রাখা প্রয়োজন। এজন্য দুধ, পনীর, ঢেঁড়স, টফু, কাঁটাযুক্ত মাছ, দই, ডিম, তিল, আমন্ড বাদাম, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি পুষ্টিসম্পন্ন খাবার দেয়া যেতে পারে।