You are currently viewing ১টা খেজুরে কত ক্যালরি থাকে? সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কি?

১টা খেজুরে কত ক্যালরি থাকে? সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কি?

১টা খেজুরে কত ক্যালরি ও খেজুর খেলে যে ১০ টি উপকার হবে তা জানার আগে আমরা আগে খেজুর সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই। খেজুর গাছ এক ধরনের শাখাবিহীন বৃক্ষ।  সুমিষ্ট ফল হিসেবে অনেক বছর আগে থেকেই এর চাষ হয়ে আসছে। মরুভূমি এলাকায় ভাল জন্মে এই গাছ। স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ কার্যকরী এই ফল যা বিশেষ পুষ্টিগুণে ভরা। ফলটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, ভিটামিন এ ও বি, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার, প্রোটিন এবং আয়রন থাকে। সকালে ৪টা খেজুর খেলে সারাদিন শরীরে ভরপুর এনার্জি থাকবে। এই ছাড়াও ফলটির আরো গুণাগুন রয়েছে। আমরা আমাদের অন্য পোস্টে রাতে খেজুর খেলে কি কি উপকার পাবেন তা বর্ণনা করেছি।

১টা খেজুরে কত ক্যালরি

১টা খেজুরে কত ক্যালরি থাকে?

একটি খেজুরে আপনি পাবেন:

  • শক্তি: ২৩ ক্যালরি
  • শর্করা: ৬.২ গ্রাম
  • সহজ শর্করা (চিনি): ৫.৩ গ্রাম
  • আমিষ: ০.২ গ্রাম

অর্থাৎ, একটি খেজুর আপনাকে দ্রুত শক্তি দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালোরি সরবরাহ করে। এতে থাকা শর্করা শরীরে দ্রুত শোষিত হয় এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এবং সহজ শর্করা (চিনি) রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। খেজুরে থাকা আমিষের পরিমাণ কম, তবে এটি কিছু প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে।

৪ টি খেজুরে কত ক্যালরি থাকে?

সাধারণত ৪টি খেজুরের ওজন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম হয়ে থাকে। সুতরাং ৪ টি খেজুরে-

  • শক্তিঃ ৯২ ক্যালরি;
  • ক্যালসিয়ামঃ ১৭২.৮ মিলিগ্রাম;
  • ফাইবারঃ ২.৫৯২ গ্রাম;
  • প্রোটিনঃ প্রায় ০.৭৬৮ গ্রাম;

এখানে, ৪ টি খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান হিসেবে করা হয়েছে। খেজুরের জাত, আকার এবং শুকনো বা ভেজা অবস্থার উপর নির্ভর করে উপাদানগুলির পরিমাণ একটু ভিন্ন হতে পারে।

সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

আমরা জানি, প্রতিদিন সকালে খেজুর খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে যে প্রধান ১০ টি উপকার পাওয়া যায় আপনাদের সুবিধার্থে তা বিস্তারিত আলোচনা করছি-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার খাবার

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

খেজুরে ফাইবার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য বা বদহজম দূর করতে পারে। শক্ত খেজুরগুলো রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায় তবে খেজুর খাওয়ার পরে কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এতে বদহজম দূর হয়।

মস্তিষ্কের গঠনে সহায়তা করে

খেজুরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে অন্যতম উৎস। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বা মস্তিষ্কে প্রদাহ কমায়। এই ফলটি মানবদেহের মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। সারাদিনের ক্লান্তিতে ৩ থেকে ৪টি খেজুর যথেষ্ট ক্লান্তিভাব দূর করার জন্য। শুধু তাই নয়, যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির জোগান দিতেও সক্ষম এই খেজুর। খেজুরে আছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ পুষ্টি উপাদান, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।

আরো পড়ুন : মধু খেলে কি হয় ও খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি?

ওজন নিয়ন্ত্রণ

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

যারা শরীরের মেদ বা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী একটি খাবার হলো খেজুর। খেজুরে থাকা ফাইবার যা ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে সহায়তা করে। তাই, প্রতিদিন সকালে পানি বা দুধে ভেজানো খেজুর খেলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাছাড়া এই খেজুর হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা হিসেবে

গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই উপকারী এই খেজুর। খেজুরে লৌহ পদার্থ থাকায় রক্তের লোহিত কণিকার উৎপাদন বাড়ায় ও রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফ্লাভানয়েড ও ফেনোলিক যৌগ উচ্চ মাত্রায় থাকে খেজুরে যা শরীরের কোষের ক্ষয় কমাতে সহায়তা করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গর্ভবতী মায়েদের সার্বিক সুস্থতায় বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন ২-৩টি করে খেজুর খেতে পারেন।

আরো দেখুন : খেজুরের উপকারিতা কি

হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির উপায়

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে

​খেজুরে থাকে আয়রন, ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক যা শরীরে রক্ত​ সরবরাহ করে এবং রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। খালি পেটে পানিতে ভেজানো খেজুর খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই খেজুর রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

ত্বক টান টান রাখার উপায়

ত্বক টান টান রাখে

ত্বকের সমস্যা সমাধানের জন্য খেজুর অসাধারণ একটি উপাদান। সম্প্রতি পশ্চিমা দেশ গুলোতে অনেক কসমেটিক ব্র্যান্ডে এই ফলটির পুষ্টিগুণকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট তৈরি করছে, কারণ তারা জানতে পেরেছে যে, অন্য কোন কিছু ত্বাকে কাজ না করলেও খেজুর ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী। সেই সাথে খেজুরের বীজের তৈরি তেলও ত্বকের যত্নে কার্যকরী।

খেজুরে ফাইবার, পটাশিয়াম, আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, সি, ডি, এবং তিন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই ফলটি ত্বকের জন্য কার্যকরী এবং শুষ্কতা দূর করতে এর কোন জুড়ি নেই। প্রাকৃতিক স্কিন ব্রাইটেনার ও হাইড্রেটরও বলা হয়ে থাকে এই ফলকে। বয়স বৃদ্ধির ফলে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরে ভিটামিন বি থাকায় ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে খেজুর খেলে (পানিতে ভিজানো হলে উত্তম) মুখের দাগ দূর হবে এবং ত্বকে লাবণ্য ফিরে আসবে।

আরো পড়ুন : খাঁটি মধু চেনার উপায় | ভেজালের বাজারে খাঁটি মধু পরীক্ষা করার নিয়ম
আরো পড়ুন : রূপচর্চা ও চর্মরোগের নিরাময়ে মধুর উপকারিতা ও এর গুনাগুণ কি কি?

হার্টের ব্লক দূর করার খাবার

হার্টের ব্লক দূর করে

সকালে খালি পেটে পানিতে ভেজানো খেজুর এবং কুসুম গরম পানি খেলে হার্ট এটাকের ভয় অনেকটাই কমে যায়। ডায়াটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ায় “এলডিএল” বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। যার কারণে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়। এছাড়াও এতে উপস্থিত পটাশিয়াম হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই যাদের হৃদরোগ এর ঝুঁকি রয়েছে তাদের জন্যও বেশ কার্যকরী এই ফল।

খুসখুসে কাশি থেকে মুক্তি দেয়

যাদের খুসখুসে কাশি রয়েছে তারা ২ থেকে ৩টি খেজুর এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন (রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ভেজালে বেশি ভালো)। ঘুম থেকে উঠে খেজুরসহ পানিটুকু খেয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন খেলে খুসখুসে কাশি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মুক্তি পাবেণ। এছাড়াও খেজুরের গুড় শুষ্ক কাশি ও ঠাণ্ডা দূর করতে খুবই কার্যকরী এবং খেজুরের গুড় মানব দেহের মিউকাস পরিষ্কার করতে সক্ষম। হাঁপানির ও শ্বাসকষ্ট সমস্যায় জর্জরিত যারা তাদের জন্য খেজুরের গুড় ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। শীতকালে বাতাসের সাথে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে, এতে অনেকে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, এই সময়ে খেজুরের গুড় খেলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়।

চুলের গোড়া শক্ত করার উপায়

চুলের গোড়া শক্ত করে

প্রায় সময় দেখা যায় যে, চুলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে একটা রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধান রয়েছে আপনার হাতের কাছেই, খাওয়া শুরু করুন খেজুর। কারণ খেজুরের মধ্যে যে তেল থাকে তা পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। এ ছাড়া চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করে খেজুর। খেজুরের বীজে থেকে তৈরি তেল ত্বকের যত্নে এবং চুলের যত্নে অনেক কার্যকরী।

ক্যান্সার প্রতিরোধক ফল

ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই খেজুর। খেজুরে বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুসফুস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে প্রতিদিন নিয়মানুসারে খেজুর সেবন করুন। এছাড়াও মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধেও খেজুর বেশ কার্যকরী। খেজুরে রয়েছে স্যলুবল, ইনস্যলুবল ফাইবার ও অ্যামিনো অ্যাসিড, যার কারণে খাবার খুব সহজে হজম হয়।

 

তথ্য সূত্র

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা :

ভুড়ি কমানের জন্য বা চিকন হওয়ার ডায়েটে অনেকেই খেজুর খেয়ে থাকে। জেনে রাখা ভালো যে, অতিরিক্ত খেজুর ওজন বাড়িয়ে দেয়। কারণ, খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, একটি খেজুরে ক্যালোরির পরিমাণ থাকে প্রায় ২.৮ গ্রাম।

অতিরিক্ত খেজুর খেলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে এবং পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে অতিরিক্ত ফাইবার উপকারের বিপরীত হতে পারে।

 

Mobasher Khan

Mobasher Khan is a skilled content writer with expertise in SEO. He has successfully contributed to companies like Tista and Tista Food, where his engaging content and SEO skills were highly valued. Mobasher sharpens his writing and digital skills through research and technical writing. He was the runner-up in Content Mania, showcasing his talent for creating compelling content. Beyond work, Mobasher loves exploring different industries and writing. His diverse interests fuel his creativity and versatility as a content writer. Mobasher is dedicated to excellence and continually seeks new learning opportunities to help organizations succeed.

Leave a Reply