মধু খেলে কি হয় ও সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি তা হয়তো অনেকেই জানেন না, তবে আজকে এই আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করবো ভালো কিছু তথ্য দিতে। মধু মানুষের জন্য আল্লাহ তা’য়ালার এক অপূর্ব নেয়ামত। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সহ যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মধু এক প্রকার মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ফুল হতে আহরণ করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। আর এ কাজটি করে শুধু মাত্র নারী মৌমাছি। উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ তরল পদার্থ হচ্ছে এই মধু।
সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি?
খালি পেটে মধু বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সকালে মধু খেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং নানা সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। মানুষ এখন স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় অনেকেই চিনির ক্ষতিকর দিক ও সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন। তাই চিনির বদলে এখন অনেকে গুড় বা মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলছেন। সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি তা জানার পর আমরা আমাদের অভ্যাস শুরু করতে পারি। আবার শীতকালে প্রতিদিন মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে তা আপনাকে অবশ্যই বাড়তি সুবিধা দিবে। প্রথমে ১ চামচ মধু দিয়ে আপনার দিনটি শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় মধুর উপকারিতা সম্পর্কে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় যা আপনার দৈনন্দিন জীবন বদলে দিতে পারে।
সকালে খালি পেটে মধু খেলে আমাদের নানা ধরনের উপকার হয়। এগুলো হলো-
- সকালে খালি পেটে মধু খেলে হজমের শক্তি বৃদ্ধি পায়;
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে;
- শরীরের বিভিন্ন স্থানের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে;
- মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে;
- রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং অসুস্থ হওয়া থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার নিয়ম
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মধু খেলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়। সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার নিয়ম হলো রোজ সকালে ১ থেকে ২ চা চামচ পরিমাণ মধু খেতে হবে। এছাড়া রোজ সকালে কুসুম গরম পানির সাথে ১ থেকে ২ চা চামচ মধুর সঙ্গে হালকা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে, পেটের ব্যথা সহ আরও নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকার পাবেন।
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
মধুর সাথে কালোজিরা ফুলের মধু খেলে আমরা আমাদের শরীরে আরও অনেক উপকার পাবো। যেমন-
- মধুর সাথে কালোজিরার মিশ্রণ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে;
- সকালে নিয়মিত মধু খেলে বাতের ব্যাথা নিরাময়ে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যায়;
- মধুর সাথে কালোজিরা ফুলের মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি থেকেও অনেক আরাম পাওয়া যায়;
- সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খেলে আপনার ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে থাকবে;
- মধু ও কালোজিরা খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও রক্তশুন্যতা দূর করে;
- কালোজিরার বিশেষত্ব হলো মৃত্যু ব্যতিত এটি সকল রোগের ঔষধ;
- সকালে মধু ও কালোজিরা আমাদের হৃদরোগ জনিত সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
সকালে খালি পেটে রসুন ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
মধুতে থাকা ‘অ্যালিসিন‘ নামক উপাদান শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত জমাটে সাহায্য করে। ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা বা পেটের যেকোনো সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে কাজ করে রসুন এবং মধুর মিশ্রণ। রসুনে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা সব ধরনের ইনফেকশন দূর করতে পারে। নিয়মিত নিয়মে মধু ও রসুন খেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর হয়। তাই আপনি নিশ্চিন্তে রসুন ও মধু খেতে পারেন।
সকালে খালি পেটে গরম পানিতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- সকালে খালি পেটে গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে তা হজমে সাহায্য করে এবং বদহজম দূর করবে;
- কাশি ও ঠান্ডাভাব থেকে মুক্তি দেয়;
- সকালে খালি পেটে গরম পানির সাথে মধু পান করে এটি ত্বকের যত্নের জন্য দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে;
- সকালে মধুর সাথে হালকা গরম পানি শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে;
- খালি পেটে গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে এটি আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় মধু খেলে কি হয়?
আমাদের অনেকেরই দুশ্চিন্তা হয় যে, প্রেগন্যান্সিতে মধু খাওয়া কি ঠিক? উত্তর হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় বা প্রেগন্যান্সিতে মধু খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। শুধু তাই নয়, মধুতে থাকা উপাদান আপনার পেটে থাকা সন্তানের পুষ্টিগুণ বজায় রাখে। তবে আগে থেকে আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেয়া বা পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো। আপনার যদি এলার্জি না থাকে বা ডাক্তার কোন কারণে খেতে নিষেধ না করেন তাহলে আপনি প্রেগন্যান্সিতে নির্ভাবনায় মধু খেতে পারেন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় ও এর উপকারিতা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
চিয়া সিডের সাথে মধু খেলে কি হয়?
চিয়া সিডের সাথে মধু পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা ও অম্লত্ব দূর হয়। মধু যেমন রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে, ঠিক তেমনি রক্তশূন্যতাও দূর করে। আবার চিয়া সিডের সাথে মধু নিয়মিত সেবন করলে তা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও অল্প পরিশ্রমে যারা ক্লান্তি অনুভব করেন অথবা সকালে হাঁটতে বের হন কিংবা ব্যায়াম করেন, তারা চিয়া সিডের সাথে মধু মিশিয়ে নিয়মিত মিশ্রণটি খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হবে। যারা মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন, তারা নিয়মিত মধু মিশিয়ে সকালে অথবা রাতে খেতে পারেন। তাতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে।
মধু বেশি খেলে কি হয়?
মধু বেশি পরিমাণে বা অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা ভাব বাড়তে পারে। মধু রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়িয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি তা জানার পর অনেকে অতিরিক্ত মধু খেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত কোন কিছুই শরীরের জন্য ঠিক নয়। মধু দাঁতে লেগে থাকলে এর কারণে দাঁতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এর সাথে মাড়ি ফুলে যাওয়া, মুখ গহ্বরের সমস্যাও হতে পারে। তাই আমাদের এই বিষয়ে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র
- কুরআন১৭:৮২, সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত নম্বর ৮২
- কুরআন১৬:৬৮,৬৯, সূরাঃ আল-ইসরা আন-নাহল, আয়াত নম্বর ৬৮ থেকে ৬৯
- মনোস্যাকারাইড ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজের উচ্চ ঘনত্বের কারণে মধু মিষ্টি হয়।
- শুধু মাত্র নারী মৌমাছিরা যারা অমৃত বা মধু সংগ্রহ করে।
- মুলহোল্যান্ড এস, চ্যাং এবি (2009)। “অনির্দিষ্ট কাশি সহ শিশুদের জন্য মধু এবং লজেঞ্জস” (PDF)।
- “শিশুদের তীব্র কাশির জন্য মধু“।
- মধু শিশুদের কাশি উপশমে ডেক্সট্রোমেথরফানের চেয়ে ভালো কাজ করে বলে মনে হয় না । অন্যান্য পর্যালোচনাগুলিও শিশুদের চিকিত্সার জন্য মধুর ব্যবহারকে সমর্থন করেছে।
- মধু নিরাপদ যখন পরিমাণমত গ্রহণ করা হয়।
- তবে অত্যধিক সেবন, বিদ্যমান রোগের অবস্থা বা ওষুধের সাথে এর বিভিন্ন, সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব বা মিথস্ক্রিয়া থাকতে পারে।
- ইসলামে, সূরা আন-নাহল (মৌমাছি)
- রোগ নিরাময়ে মধু
সাধারণ জিজ্ঞাসা
মধু খেলে কি কি ক্ষতি হয়?
মধু বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলার সমস্যা বাড়তে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন বেশি পরিমানে মধু সেবন করেন, তাহলে এটি আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত কোন কিছুই শরীরের জন্য ঠিক না। তাই অতিরিক্ত মধু আপনার মুখের এবং স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করতে পারে। মধু দাঁতে লেগে থাকলে এর কারণে দাঁতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সাথে মাড়ি ফুলে যাওয়া, মুখ গহ্বরের সমস্যাও হতে পারে।
প্রতিদিন কি পরিমান মধু খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মধু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ১ থেকে ২ চামচ মধু সরাসরি খাওয়ার অভ্যাস তৈরী করতে পারলে ভালো। তবে প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানির দিয়ে ১ থেকে ২ চামচ মধুর সাথে হালকা লেবুর রস দিয়ে পান করলে পেটের সমস্যা দূর হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চিনির চেয়ে মধু কি ভালো?
যে মধু খাঁটি বা মৌমাছির চাক ভেঙে নির্যাস বের করা হয়, সেই মধু শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। বেশি পরিমাণে মধু খেলে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে চিনির চেয়ে মধু ভালো স্বল্প কপরিমানে খাওয়া যেতে পারে পানির সঙ্গে মিশিয়ে। তবে ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়াই ভালো।